পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিবাজীর নৌবল, ইংরাজ ও সিদ্দিদের সহিত সংঘর্ষ
১৮৩

 সিদ্দি কাসিম বড় চতুর সাহসী ও পরিশ্রমী লোক। তিনি সুশাসনে এবং কাজকর্মে সর্বদা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখিয়া যুদ্ধে জাহাজ ও গোলাবারুদ বাড়াইলেন, অনেক মারাঠা-জাহাজ ধরিয়া ধনলাভ কবিলেন। অবশেষে ১০ ফেব্রুয়ারি ১৬৯১ সালে, যখন দণ্ডা-দুর্গের মারাঠা-রক্ষীগণ সারাদিন হোলী উৎসবে মাতিয়া, মদ খাইয়া, ক্লান্ত-অবস্থায় রাত্রে অসাবধান হইয়া ঘুমাইতেছিল, তখন কাসিম গোপনে চল্লিশখানা জাহাজে সৈন্য লইয়া নিঃশব্দে দণ্ডার সমুদ্র-তীরের ঘাটে (অর্থাৎ দুর্গের দক্ষিণ মুখে। পৌঁছিলেন। এদিকে সিদ্দি খয়রিয়ৎ পাঁচশত সেনা লইয়া স্থলের দিকের দেওয়ালে (অর্থাৎ দুর্গের উত্তর-পূর্বমুখে) গিয়া মহাবাদ্য ও গোলমালের সহিত সেই দেওয়াল আক্রমণ করবার ভান করিলেন। মারাঠা-সৈন্যের অধিকাংশই এই দ্বিতীয় দিকে ছুটিল; অব সেই অবসরে কাসিম বিনা বাধায় ঘাটের দেওয়াল বাহিয়া উঠিয়া দুর্গে ঢুকিলেন। তাঁহার জনকতক লোক মরিল বটে, কিন্তু সেখানে মারাঠাদের যে-কয়জন রক্ষী ছিল তাহারা পরাস্ত হইয়া পলাইল। কাসিম দুর্গের মধ্যে আরও অগ্রসর হইলেন। এমন সময় হঠাৎ আগুন লাগিয়া দুর্গের বারুদের গুদাম ফাটিয়া যাওয়ায় মারাঠা কিলাদার এবং দুই পক্ষের অনেক লোক পুড়িয়া মরিল। এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় সৈন্যদল স্তম্ভিত হইয়া দাঁড়াইল। কাসিম অমনি চেঁচাইয়া উঠিলেন, “খাস! খাসসু (তাহার রণ-বাণী)! বীরগণ, আশ্বস্ত হও। আমি বঁচিয়া আছি, আমার কোন জখম হয় নাই।” তাহার পর শত্রু কাটিতে কাটিতে অগ্রসর হইয়া পূর্বদিক হইতে আগত খয়রিয়তের দলের সহিত মিলিলেন, এবং সমস্ত দুর্গ দখল করিয়া মারাঠাদের নিঃশেষ করিয়া দিলেন।

 শিবাজী জঞ্জিরা লইবার জন্য দিনরাত ভাবিতেছেন, আর কিনা তাঁহার হাত হইতে দণ্ডা পর্যন্ত চলিয়া গেল। এই সংবাদে তিনি