পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিবাজীর অভ্যুদয়
১৭

পরিবর্ত্তনের মধ্যে কাটান। এজন্য তাঁহাকে নানা স্থানে ঘুরিতে হয়। তাঁহার স্ত্রী ও পুত্রদ্বয় শিবনের-দুর্গে আশ্রয় লইয়াহিল। তাহার পর ১৬৩৬ সালে মুঘলদের সঙ্গে তাঁহার যুদ্ধ মিটিল, এবং তিনি বিজাপুর-রাজসরকারে কার্য লইলেন বটে, কিন্তু মহারাষ্ট্রে আর রহিলেন না, মহীশূর প্রদেশে নুতন জাগীর স্থাপন করিতে চলিয়া গেলেন। সেখানে তাঁহার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী তুকা বাঈ মোহিতে তাঁহার গর্ভজাত পুত্র ব্যঙ্কোজী (ওরফে একোজী)-কে লইয়া বাস করিতে লাগিলেন। প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও দ্বিতীয় পুত্র যেন ত্যাজ্য হইল; তাহাদের বাসের জন্য পুণা গ্রাম এবং ভরণপোষণের ব্যয়ের জন্য ঐ জেলার ক্ষুদ্র জাগীরটি দিয়া গেলেন। জীজা বাঈ এখন প্রৌঢ়া, তাঁহার বয়স ৪১ বৎসর। তরুণবয়স্কা সুন্দরী সপত্নীর আগমনে তিনি স্বামী-সোহাগ হইতে বঞ্চিত হইলেন। জন্মের পর দশ বৎসর পর্যন্ত শিবাজী পিতাকে খুব কম সময় দেখিতে পাইয়াছিলেন, আর তাহার পর দুজনে সম্পূর্ণ পৃথক হইয়া গেলেন।

শিবাজীর মাতৃভক্তি ও ধর্ম্মশিক্ষা

 স্বামীর অবহেলার ফলে জীজা বাঈ-এর মন ধর্ম্মে একনিষ্ঠ হইল। আগেও তিনি ধর্ম্মপ্রাণ ছিলেন, এখন একেবারে সন্ন্যাসিনীর মত জীবন যাপন করিতে লাগিলেন—যদিও উপযুক্ত সময়ে জমিদারীর আবশ্যক কাজকর্ম্ম দেখিতেন। মাতার এই ধর্ম্মভাব পুত্রের তরুণ হৃদয় অধিকার করিল। শিবাজী নির্জ্জনে বাড়িতে লাগিলেন; সঙ্গীহীন বালক, ভাই নাই, বোন নাই, পিতা নাই, এই নিঃসঙ্গ জীবনের ফলে মাতা ও পুত্র আরও ঘনিষ্ঠ হইলেন; শিবাজীর স্বাভাবিক মাতৃভক্তি শেষে দেবোপাসনার মত ঐকান্তিক হইয়া দাঁড়াইল।

 শিবাজী বাল্যকাল হইতে নিজের কাজ নিজে করিতে শিখিলেন—