পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
শিবাজী

অন্য কাহারও নিকট আদেশ বা বুদ্ধি লইবার জন্য তাঁহাকে অপেক্ষা করিতে হইত না। এইরূপে জীবন-প্রভাতের সঙ্গে সঙ্গেই তিনি দায়িত্ব জ্ঞান ও কর্ত্তৃত্বে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করিলেন। বিখ্যাত পাঠান-রাজা শের শাহের বাল্যজীবনও ঠিক শিবাজীর মত; দুজনেই সামান্য জাগীর দারের পুত্র হইয়া জন্মান, বিমাতার প্রেমে মুগ্ধ পিতার অবহেলার মধ্যে বাড়িয়া উঠেন, বনজঙ্গল ঘুরিয়া, কৃষক ডাকাত প্রভৃতির সহিত মিশিয়া দেশ ও মানুষ সম্বন্ধে প্রকৃত জ্ঞান লাভ করেন, চরিত্রের দৃঢ়তা,শ্রমশীলতা ও স্বাবলম্বন নিজ হইতে শিক্ষা করেন, পৈত্রিক জাগীরের কাজ চালাইয়া নিজকে ভবিষ্যৎ রাজ্যশাসন কাজের উপযোগী করিয়া গড়িয়া তোলেন। দুজনেরই চরিত্র ও প্রতিভা একরূপ, দুজনেই ঠিক একশ্রেণীর ঘটনার মধ্য দিয়া বর্দ্ধিত হন।

পুণার অবস্থা

 আজ পুণা শহর বম্বে প্রদেশের দ্বিতীয় রাজধানী, মারাঠাদের শিক্ষা সভ্যতা ও আকাঙ্ক্ষার সর্বশ্রেষ্ঠ কেন্দ্র। কিন্তু ১৬৩৭ সালে যখন বালক শিবাজী এখানে বাস করিতে আসিলেন, তখন পুণা একটি গণ্ডগ্রাম—অতি শোচনীয় দশায় উপস্থিত। ছয় বৎসর ধরিয়া যুদ্ধে দেশ ছারখার হইয়া গিয়াছিল, বার বার নানা আক্রমণকারী আসিয়া গ্রাম লুঠ করিয়া পুড়াইয়া দিয়া চলিয়া যাইত, তাহার পর অরাজকতার সুযোগে আশপাশের ডাকাত-সর্দ্দারেরা নিজ আধিপত্য স্থাপন করিত। অঞ্চলটি ভূতের লীলাক্ষেত্র হইয়া দাঁড়াইয়াছিল।

 মানুষের মধ্যে যুদ্ধ, অশান্তি ও লোকক্ষয়ের ফলে পাহাড়ের গায়ে জঙ্গলে নেকড়ে-বাঘের বংশ খুব বাড়িয়া গিয়াছিল; তাহাদের উৎপাতে পুণা জেলার গ্রামগুলিতে ভেড়া বাছুর এবং ছেলেপিলে নিরাপদ ছিল না; ভয়ে চাষবাস প্রায় বন্ধ হইল।