পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিবাজীর অভ্যুদয়
১৯

দাদাজী কোণ্ডদেব, অভিভাবক

 ১৬৩৭ সালে, শাহজী বিজাপুরের চাকরি লইয়া মহীশূর প্রদেশে চলিয়া যাইবার সময় দাদাজী কোণ্ডদেব নামক এক বিচক্ষণ সচ্চরিত্র ব্রাহ্মণকে পুণা জাগীরের কার্য্যকর্ত্তা নিযুক্ত করিয়া তাঁহাকে বলিলেন, “আমার প্রথম স্ত্রী ও পুত্র শিবাজী শিবনের দুর্গে আছে। তাহাদের পুণায় আনিয়া রক্ষণাবেক্ষণ কর।” তাহাই করা হইল।[১]

 এই পুণা জাগীরের খাজনা কাগজে চল্লিশ হাজার হোণ (অর্থাৎ প্রায় দেড় লক্ষ টাকা) ছিল, কিন্তু আদায় হইত অনেক কম। দাদাজী কোণ্ডদেব জমিদারী কাজে সুপরিপক্ক। তিনি সহ্যাদ্রি শ্রেণীর পাহাড়ী লোকদিগকে পুরস্কার দিয়া সেখানকার নেকড়ের দল নির্ব্বংশ করিলেন; ঐ লোকদের হাত করিয়া প্রথমে জমির খাজনা খুব কম, পরে ধীরে ধীরে বর্দ্ধনশীল নিরিখে ধার্য্য করিয়া, তাহাদিগকে সমতল ভূমিতে আসিতে ও চাষ করিতে রাজি করাইলেন। এইরূপে দেশে লোকের বসতি ও কৃষিকার্য্য দ্রুত বাড়িতে লাগিল।

 শান্তিরক্ষার জন্য তিনি কতকগুলি স্থানীয় সৈন্য,অর্থাৎ বর্ক-আন্দাজ, নিযুক্ত করিয়া জায়গায় জায়গায় থানা বসাইলেন। দাদাজীর দৃঢ়শাসন ও ন্যায় বিচারে দস্যু ও অত্যাচারীর নাম পর্য্যন্ত দেশ হইতে লোপ পাইল। তাঁহার নিয়মপালনের একটি গল্প আছে। তিনি “শাহজী বাগ” নাম দিয়া একটি ফলের বাগান করেন। তাঁহার কড়া আদেশ ছিল, কেহ গাছের পাতাটি পর্য্যন্ত লইলে শাস্তি পাইবে। একদিন ভুলিয়া তিনি নিজেই একটি আম পাড়িলেন। নিয়মের কথা মনে পড়িলে নিজের উপর দণ্ড দিবার জন্য তিনি অপরাধী নিজ হাত

  1. দুই বৎসর পরে (১৬৬৯) জীজা বাঈ ও শিবাজী দাদাজীর সহিত শাহজীর নিকট বাঙ্গালোরে গেলেন। কিন্তু তিনি তাঁহাদের পুণায় ফিরিয়া পাঠাইয়া দিলেন।