পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/২৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২৬
শিবাজী

রাজ্য-লুঠের বলে যে জাতি বলীয়ান হইবার চেষ্টা করে তাহার অর্থবল এইরূপ মরীচিকা মাত্র।

ষষ্ঠ কারণ—সত্যপ্রিয়তার ও রাষ্ট্রীয় বলের অভাব

 মারাঠাদের মধ্যে বীর ও যোদ্ধা অনেক ছিল বটে, কিন্তু তাহাদের নেতারা রাজনীতির ক্ষেত্রে কৌশল ও প্রতারণাই বেশী অবলম্বন কবিতেন। তাহা বুঝিতেন না যে, মিথ্যা কথা দু'একবাব চলে চিরকাল চলে না। কথা রক্ষা না করিলে, বিশ্বাসঘাতক হইলে, সত্য ব্যবহার না করিলে, কোন রাজাই টিকিতে পাবে না। মারাঠা সেনাপতি ও মন্ত্রী লাভের সুযোগ পাইলেই সন্ধি ভঙ্গ করিতেন, নিজ কথাব বিপরীত আচরণ করিতেন—ইহাতে কিছুমাত্র লজ্জিত হইতেন না। কেহই তাহাদের উপর নির্ভব করিতে, বিশ্বাস করিতে পারিত না।

 রাজ্য রক্ষা করিতে হইলে যুদ্ধ ও (কৗশল (ডিপ্লোম্যাসি) দুই-ই আবশ্যক, এবং যুদ্ধও সময় বুঝিয়া, পূর্ব প্রস্তুত হইয়া, করা উচিত। কিন্তু মারাঠা রাজনীতি ছিল প্রত্যেক বৎসর কোন-না কোন প্রদেশে অভিযান পাঠান। এই বাৎসরিক যুদ্ধ কিছু অর্থ লাভ হইত বটে, কিন্তু সৈন্যনাশ ও শত্রুবৃদ্ধি হইয়া তদপেক্ষা অধিক ক্ষতি করিত। এই সব দুরদৃষ্টিহীন অভিযান এবং কূট পররাষ্ট্র নীতি ও ষডযন্ত্র অনুসবণের ফলে মারাঠা রাজশক্তি ক্রমেই দুর্বল হইয়া পডিতে লাগিল। আর সেই সময় সুদক্ষ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বিদেশী বণিকেরা স্থিরবুদ্ধিতে পদে পদে অগ্রসর হইযা, ক্রমশঃ নিজ শক্তি ও প্রভাব বৃদ্ধি কবিয়া, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষে ভারতের সাধ্বভৌম প্রভু হইল, মারাঠা জাতি ইংরাজের অধীন হইল। ইহা প্রকৃতির অনিবার্য্য বিধান।

শিবাজীর চরিত্র

 মারাঠাদের গৌরব যে-সময়েই শেষ হউক না কেন, শিবাজী তাহায়