পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিবাজীর অভ্যুদয়
২৩

ইচ্ছা করিয়া বিপদ ও গোলমালের মধ্যে গেলে, অথবা স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের চেষ্টা করিলে, পরিণাম শোচনীয় হইবে। শিবাজী শুনিলেন না; শাহজীর নিকট দাদাজী নালিশ করিলেন, কিন্তু পিতার নিষেধে কোনই ফল হইল না। দুশ্চিন্তায় ও মনঃকষ্টে বৃদ্ধ দাদাজী প্রাণত্যাগ করিলেন (১৬৪৭) এবং বিশ বৎসর বয়সে শিবাজী নিজেই নিজের কর্ত্তা হইলেন।

যুবক শিবাজীর প্রথম স্বাধীন কাজ

 ইতিমধ্যে শিবাজী যুদ্ধবিদ্যা এবং জমিদারী-চালান সম্পূর্ণরূপে শিখিয়াছিলেন, এবং ঐ প্রদেশের প্রজা ও সৈন্যগণের সহিত বিশেষভাবে পরিচিত হইয়াছিলেন। নিজের বুদ্ধিতে কাজ করিতে এবং লোককে অধীনে রাখিতে ও খাটাইতে তাঁহার অভ্যাস হইয়াছিল। তাঁহার বর্ত্তমান কর্ম্মচারিগুলি বিশ্বস্ত ও কার্য্যদক্ষ, শ্যামরাজ নীলকণ্ঠ রাঞ্ঝেকর ছিলেন পেশোয়া বা দেওয়ান, বালকৃষ্ণ দীক্ষিত ছিলেন মজমুয়াদার (হিসাব-লেখক), সোণাজী পন্ত দবীর (বা পত্রলেখক) এবং রঘুনাথ বল্লাল কোর্‌ডে সবনীস্ অর্থাৎ সৈন্যদের বেতন-কর্ত্তা। ইঁহাদের শাহজী আগে পাঠাইয়া দিয়াছিলেন।

 ১৬৪৬ সালে বিজাপুর রাজ্যে দুর্দিন দেখা দিল। রাজা মুহম্মদ আদিল শাহ অনেককাল গৌরবে রাজ্যশাসন এবং দেশবিজয় করিবার পর শয্যাশায়ী হইয়া পড়িলেন। তাঁহার জীবনসংশয় হইল। তিনি ইহার পর আরও দশ বৎসর বাঁচিয়া ছিলেন বটে, কিন্তু তাহা অর্ধমৃত জড় অবস্থায়। সাধারণ লোকেরা বলিত যে, সাধু ফকীর শাহ হাসিম উলুবী মন্ত্রবলে নিজ জীবনের দশ বৎসর পরমায়ু রাজাকে দান করেন, সেই ধার-করা প্রাণ লইয়া বাজা এই দশ বৎসর কোনক্রমে বাঁচিয়া ছিলেন।