পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মুঘল ও বিজাপুরের সহিত প্রথম যুদ্ধ
৩৯

আফজলের আক্রমণে শিবাজীর ভয় ও চিন্তা

 ইতিমধ্যে আফজল খাঁর আগমন-সংবাদে শিবাজীর অনুচরগণের মধ্যে মহা ভয় ও ভাবনা উপস্থিত হইয়াছিল। তাহারা এ পর্য্যন্ত ছোটখাট লড়াই ও সামান্য পদের লোকজনের ধনসম্পত্তি লুটপাট করিয়াছে। এইবার একটি শিক্ষিত, সুসজ্জিত বিশাল বাহিনী একজন বিখ্যাত বীর সেনাপতির অধীনে তাহাদের বিরুদ্ধে লড়িতে আসিয়াছে, বিজাপুর হইতে বাই পর্য্যন্ত অপ্রতিহত তেজে অগ্রসর হইয়াছে, মারাঠারা তাহাদের বাধা দিতে মোটেই সাহস পায় নাই। আফজল এর অদম্য শক্তি ও নিষ্ঠুরতার গল্প দেশময় ছড়াইয়া পড়িয়াছিল। কয়েক বৎসর পূর্ব্বে সেরা-দুর্গের জমিদার কস্তুরী রঙ্গ, বিজাপুরী সৈন্যের শিবিরে আফজল খাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করিতে আসিলে, আফজল তাঁহাকে ধরিয়া খুন করেন। সুতরাং শিবাজী প্রথম যেদিন নিজ প্রধানদের ডাকিয়া তাহাদের মত জানিতে চাহিলেন, সকলেই ভয়ে তাঁহাকে সন্ধি করিতে পরামর্শ দিল,বলিল—যুদ্ধ করিলে বৃথা প্রাণনাশ হইবে,জয়লাভ অসম্ভব।

 শিবাজী বিষম সমস্যায় পড়িলেন। যদি তিনি এখন আদিল শাহর বশ্যতা স্বীকার করেন, তবে তাঁহার ভবিষ্যৎ উন্নতির পথ চিরদিনের জন্য রুদ্ধ হইয়া যাইবে;—তাঁহাকে হয় বিজাপুরের বন্দীশালায়, না হয় পুণায় সামান্য আজ্ঞাবাহী জাগীরদার হইয়া জীবন কাটাইতে হইবে। আর যদি এখন বিজাপুর-রাজসৈন্যের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেন, তরে সুলতান আমরণ তাঁহার শত্রু হইয়া থাকিবেন এবং তাঁহাকে অবশিষ্ট জীবন একে বারে অসহায় বন্ধুহীন অবস্থায় মুঘল ও অন্যান্য রাজার সহিত যুদ্ধ করিয়া কাটাইতে হইবে। সারাদিন ভাবিয়া ভাবিয়া রাত্রে তাহার চিন্তা জর্জ্জরিত দেহে তন্দ্রা আসিল। প্রবাদ আছে, স্বপ্নে ভবানী দেবী তাঁহাকে দেখা দিয়া বলিলেন, “বৎস! ভয় নাই, আমি তোমায় রক্ষা করিব।