পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
শিবাজী

মোতায়েন করিয়া, অবশিষ্ট চারিশত বীরের সহিত তিনি মুঘল-শিবিরের সীমার মধ্যে প্রবেশ করিলেন। মুসলমান প্রহরীরা জিজ্ঞাসা করিল, “কে তোমরা?” শিবাজী উত্তর দিলেন, “আমরা বাদশাহর দক্ষিণী সৈন্য, নির্দ্দিষ্ট স্থানে হাজির থাকিবার জন্য যাইতেছি।” প্রহরী আর দ্বিরুক্তি করিল না। তাহার পর পুণার এক নির্জ্জন কোণে চুপ করিয়া কয়েক ঘণ্টা কাটাইয়া, শিবাজী মধ্যরাত্রে শায়েস্তা খাঁর বাসগৃহের কাছে আসিয়া দাঁড়াইলেন। বাল্যকাল হইতেই এখানকার পথঘাট তাঁহার সুপরিচিত।

 তখন রমজান মাস। এই মাসে মুসলমানেরা দিবাভাগ উপবাসে কাটাইয়া রাত্রে আহার করে। সারা দিন উপবাসের পর প্রথম রাতে গুরু ভোজন করিয়া নবাবের বাড়ীর সকলেই গভীর নিদ্রায় মগ্ন। শুধু জনকয়েক পাচক জাগিয়া—সূর্য্যোদয়ের পূর্ব্বে খাইবার খানা রাঁধিতে আরম্ভ করিয়াছে। তাহারা কোন শব্দ করিবার পূর্ব্বেই মারাঠারা গিয়া তাহাদের কাটিয়া ফেলিল। এই রান্নাঘরটি বাহিরে, ইহার গায়েই অন্দরমহলের চাকরদিগের থাকিবার ঘর, মধ্যে একটি দেওয়াল খাড়া। পূর্ব্বে এই দেওয়ালে একটি ছোট দরজা ছিল, শায়েস্তা খাঁ সেই দরজার ফাঁক ইট দিয়া বন্ধ করিয়া দিয়াছেন। শিবাজীর সঙ্গীরা শাবল দিয়া দরজার ইটগুলি খুলিতে লাগিল। সেই শব্দে ওপাশের, অর্থাৎ অন্দরমহলের, চাকরেরা জাগিয়া উঠিল এবং খাঁকে জানাইল যে বোধ হয় চোরে সিঁধ কাটিতেছে। এই সামান্য কারণে নিদ্রার ব্যাঘাত করায় খাঁ চটিয়া, ধমক দিয়া তাহাদের তাড়াইয়া দিলেন।

 ইট সরাইয়া ক্রমে দেওয়ালের ছিদ্র মানুষ ঢুকিবার মত বড় করা হইল। প্রথমেই শিবাজী নিজে তাঁহার রক্ষী চিম্‌নাজী বাপুজীকে লইয়া অন্দরমহলে প্রবেশ করিলেন, পিছু পিছু চলিল তাঁহার দুই শত সৈন্য। বাকী দুইশত বীর বাবাজী বাপুজীর অধীনে ছিদ্রের বাহিরে খাড়া