পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাচ বৎসর ধরিয়া যুদ্ধ, ১৬৬০-১৬৬৪
৫৭

রহিল। তরবারি ও ছোরা দিয়া কানাৎ কাটিয়া পথ করিয়া সদলে শিবাজী তাঁবুর পর তাঁবু পার হইয়া শেষে শায়েস্তা খাঁর শয়নকক্ষে গিয়া হাজির। তাঁহাদের দেখিয়া অন্দরের স্ত্রীলোকেরা ভয়ে খাঁকে জাগাইল। কিন্তু খাঁ তরবারি ধরিবার আগেই শিবাজী তাঁহার উপর লাফাইয়া পড়িয়া এক কোপে তাঁহার হাতের আঙ্গুল কাটিয়া দিলেন। এই সময় অন্দরের এক চতুর দাসী বুদ্ধি করিয়া ঘরের প্রদীপ নিবাইয়া দিল; মারাঠারা অন্ধকারেই তলোয়ার চালাইতে লাগিল। দু’জন মারাঠা অন্ধকারে পথ দেখিতে না পাইয়া জলের চৌবাচ্চায় পড়িয়া গেল। এই গোলমালের সুযোগে দাসীরা খাঁ-সাহেবকে নিরাপদ স্থানে সরাইয়া ফেলিল। কিন্তু অন্দরমহলে শিবাজীর লোকজন পুরাদমে সংহার-কার্য্য চালাইতে লাগিল, ছয়জন বাঁদী হত এবং আটজন আহত হইল।

 এদিকে শিবাজীর অপর দুইশত সঙ্গী বাহিরের রক্ষীগৃহে ঢুকিয়া নিদ্রিত ও অর্ধনিদ্রিত প্রহরীদের হত্যা করিল, আর বিদ্রুপ করিয়া বলিতে লাগিল, “তোরা বুঝি এমনি করিয়া ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া পাহারা দিস্?” তাহার পর নহবতের ঘরে ঢুকিয়া বলিল, “খাঁ-সাহেবের হুকুম, খুব জোরে বাজাও।” তখন জয়ঢাক, তুরী ভেরী ও করতালের শব্দের সহিত মারাঠাদের চীৎকার মিশিয়া এক তাণ্ডব ব্যাপার সৃষ্টি করিল। অন্দর হইতে আর্ত্তনাদ এবং মারাঠাদের হুঙ্কার শুনিয়া মুঘল-সৈন্যগণ বুঝিতে পারিল তাহাদের সেনাপতিকে শত্রু আক্রমণ করিয়াছে। অমনি চারিদিকে সাজ সাজ রব উঠিল।

 শায়েস্তা খাঁর পুত্র আবুল ফৎ সকলের আগে পিতাকে বাঁচাইবার জন্য ছুটিলেন। কিন্তু একাকী কি করিবেন? তিনিও শত্রুহস্তে নিহত হইলেন। একজন মুঘল-সেনানীর বাসা ছিল অন্দরমহলের পাশেই। মারাঠারা অন্দরের দরজা ভিতর হইতে বন্ধ করিয়া দিয়াছে দেখিয়া,