পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জয়সিংহ ও শিবাজী
৭৭

উগ্রসেন কাছোয়াকে শিবাজীর নিকট পাঠাইয়া দিয়া জানাইলেন, “যদি আপনার সব দুর্গগুলি সমর্পণ করিতে প্রস্তুত থাকেন তবে আসুন, নচেৎ ঐখান হইতেই ফিরিয়া যান।” শিবাজী “আচ্ছা! আচ্ছা!” বলিয়া উহাদের সঙ্গে আসিলেন। শিবির-দ্বারে পৌঁছিলে, জয়সিংহের সর্ব্বপ্রধান সৈনিক কর্ম্মচারী বখ্‌শী তাঁহাকে অভ্যর্থনা করিয়া ভিতরে আনিলেন। রাজপুত রাজা স্বয়ং কয়েক পদ অগ্রসর হইয়া শিবাজীকে আলিঙ্গন করিলেন এবং হাতে ধরিয়া নিজের পাশে গদীর উপর বসাইলেন। তাঁহার রাজপত রক্ষিগণ তরবার ও বল্লম হাতে করিয়া চারিদিকে সতর্ক হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল, কি জানি যদি বা আবার আফজল খাঁর মত কাণ্ড হয়!

 চতুর জয়সিংহ শিবাজীকে শিক্ষা দিবার জন্য একটি অভিনয়ের বন্দোবস্ত করিয়া রাখিয়াছিলেন। পূর্ব্বদিন তিনি দিলির খাঁ ও কীরত সিংহকে হুকুম দিয়াছিলেন যে, তাঁহার তাম্বু হইতে সঙ্কেত-চিহ্ন দেখিলেই তাঁহারা মুর্চা হইতে ছুটিয়া অগ্রসর হইয়া পুরন্দরের খড়কালা নামক অংশ দখল করিবেন। শিবাজী পৌঁছামাত্র জয়সিংহ সেই সঙ্কেত করিলেন, আর মুঘলেরা লড়িয়া ঐ স্থানটি দখল করিল, আশীজন মারাঠা মারা গেল, আরও অনেক জখম হইল। এই যুদ্ধ জয়সিংহের তাম্বুর ভিতর হইতে পরিষ্কার দেখা যাইতে লাগিল। শিবাজী ঘটনাটা কি তাহা জিজ্ঞাসা করিয়া জানিয়া লইয়া বলিলেন, “আর বৃথা আমার লোকহত্যা করিবেন না, যুদ্ধ বন্ধ করুন, আমি এখনই পুরন্দর ছাড়িয়া দিতেছি।” তখন জয়সিংহ তাঁহার মীরতুজুক বাজীবেগকে পাঠাইয়া দিলির খাঁকে রণে ক্ষান্ত হইতে হুকুম দিলেন; সেই সঙ্গে শিবাজীও নিজ কর্ম্মচারী পাঠাইয়া মারাঠা দুর্গস্বামীকে পুরন্দর সমর্পণ করিতে বলিলেন। দুর্গবাসী জিনিসপত্র গুছাইতে একদিন সময় চাহিল।