পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জয়সিংহ ও শিবাজী
৭৯

নিজ সৈন্য দ্বারা কাড়িয়া লইবেন, এবং বাদশাহ ইহাতে তাঁহার অধিকার স্বীকার করিবেন, কিন্তু তজ্জন্য শিবাজী তাঁহাকে চল্লিশ লক্ষ হোণ (অর্থাৎ দুই কোটি টাকা) তের কিস্তিতে সেলামী দিবেন। এইরূপে জয়সিংহের কুটনীতির ফলে শিবাজী ও আদিল শাহর মধ্যে স্থায়ী কলহের বীজ রোপিত হইল।

শিবাজী মুঘলরাজের বাধ্যতা স্বীকার করিলেন

 দিলির খাঁ প্রাণপণ পরিশ্রম এবং রক্তপাত করিয়া পুরন্দরের অনেক অংশ দখল করিয়াছেন, আর এদিকে শিবাজী আসিয়া চুপ করিয়া দুর্গটি জয়সিংহের হাতে হাড়িয়া দিয়া খাঁকে গৌরব হইতে বঞ্চিত করিলেন। তিনি রাগিয়া বলিলেন যে, সন্ধিতে রাজি হইবেন না, শেষ অবধি মারাঠাদের ধ্বংস করিবেন। সুতরাং জয়সিংহ পরদিন (১২ই জুন) শিবাজীকে হাতীতে চড়াইয়া নিজ কর্ম্মচারী রাজা রায়সিংহ শিশোদিয়ার সহিত দিলির খাঁর নিকট পাঠাইয়া দিলেন। এই নম্রতায় দিলির খাঁ আপ্যায়িত হইলেন। তিনি শিবাজীকে নানা উপহার দিয়া সঙ্গে করিয়া জয়সিংহের তাঁবুতে ফিরাইয়া আনিয়া তাঁহার হাত ধরিয়া রাজপুত রাজার হাতে সঁপিয়া দিলেন। মুঘল সৈন্যগণ হাতীর উপর শিবাজীকে দেখিয়া বুঝিল যে, সত্যসত্যই তাহাদের সম্পূর্ণ জয় হইয়াছে।

 তাহার পর জয়সিংহ শিবাজীকে খেলাৎ পরাইয়া তাঁহার কোমরে নিজের তরবারি বাঁধিয়া দিলেন, কারণ শিবাজী সন্ধি করিবার জন্য নিরস্ত্র হইয়া আসিয়াছিলেন। তিনি ভদ্রতার খাতিরে কিছুক্ষণ তরবারিটা পরিয়া পরে কোমর হইতে খুলিয়া জয়সিংহের সম্মুখে রাখিয়া বলিলেন, “আমি বাদশাহর বাধ্য কিন্তু অস্ত্রহীন দাস হইয়া তাঁহার কাজ করিব।”

 এইদিন মারাঠারা পুরন্দর-দুর্গ ছাড়িয়া দিল; তাহাদের চারি হাজার সৈন্য এবং তিন হাজার স্ত্রীলোক বালক ও চাকর বাহির হইয়া চলিয়া