পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০
শি বা জী

গেল, কিন্তু সমস্ত অস্ত্র গোলা বারুদ ও সম্পত্তি বাদশাহর জব্‌ৎ হইল। অপরাপর দুর্গ সমর্পণ করিবার জন্য শিবাজী মুঘল-কর্ম্মচারীদের সহিত নিজ চাকর পাঠাইয়া দিলেন। ১৪ই জুন, জয়সিংহের নিকট হইতে একটি হাতী ও দুইটি ঘোড়া উপহার পাইয়া শিবাজী বিদায় লইলেন। ১৮ই তারিখে তাঁহার পুত্র শম্ভুজী রাজগড় হইতে আসিয়া জয়সিংহের শিবিরে পৌঁছিলেন।

 এইরূপে জয়সিংহ আশ্চর্য্য জয়লাভ করিলেন।

বিজাপুর-আক্রমণে শিবাজীর সহায়তা ও কীর্ত্তি

 পুরন্দরের সন্ধির শর্ত্তগুলি জানিয়া এবং শিবাজী নিজ প্রতিজ্ঞা পূর্ণ মাত্রায় পালন করিয়াছেন এই সংবাদ পাইয়া, বাদশাহ অত্যন্ত তুষ্ট হইয়া সব প্রার্থনা মঞ্জুর করিলেন এবং নিজ পাঞ্জা-অঙ্কিত (অর্থাৎ হাতের আঙ্গুলগুলি সিন্দুরে ডুবাইয়া কাগজের উপর ছাপ দেওয়া) এক ফর্ম্মান্ (বা বাদশাহর নিজের জবানীতে লিখিত ও সহি করা পত্র) এবং একপ্রস্থ খেলাৎ শিবাজীর জন্য পাঠাইয়া দিলেন। এগুলি ৩০এ সেপ্টেম্বর জয়সিংহের শিবিরের নিকট পৌছিল। শিবাজী জয়সিংহের আহ্বানে কয়েক মাইল হাঁটিয়া অগ্রসর হইয়া বাদশাহী ফর্ম্মানকে পথে অভ্যর্থনা করিলেন এবং পত্রখানি মাথার উপর ধরিলেন। (ইহাই সে যুগের প্রথা ছিল।) সন্ধির পর হইতে এই সাড়ে তিন মাস শিবাজী অস্ত্রধারণ ত্যাগ করিয়াছিলেন, কারণ তিনি বাদশাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিয়া অপরাধী হইয়াছেন, যতক্ষণ পর্য্যন্ত বাদশাহর ক্ষমা না পাওয়া যায় ততক্ষণ জেলখানার কয়েদীর মত তাঁহাকে নিরস্ত্র থাকিতে হইবে। এখন ফর্ম্মান পাইবামাত্র জয়সিংহ তাঁহাকে জোর করিয়া নিজের একখানি মণিখচিত তরবারি এবং ছোরা পরাইয়া দিলেন।—যেন শিবাজীর বিদ্রোহের প্রায়শ্চিত্ত সম্পূর্ণ হইল।