পাতা:শিশু-ভারতী - অষ্টম খণ্ড.djvu/২৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

33. -- প্রকৃতির লীলাভূমি ভারতবর্ষে অরণ্যে, কাস্তারে, পৰ্ব্বতে, মাঠে, বাগানে, গৃহপাশ্বে সৰ্ব্বত্রই প্রায় সকল ঋতুতেই অসংখ্য প্রকার বিবিধ বর্ণের কুল দেখিতে পাওয়া যায়। এমত অবস্থায় নানাপ্রকাশ পুষ্প যে দেশীয় রঞ্জন-শিল্পে বিশেষ প্রতিপত্তি লাভ করিবে, ইহা অতি স্বাভাবিক। কিন্তু এতদেশীয় অসংখ্য প্রকার পুষ্প হইতেই যে বর্ণনামুযায়ী রং পাওয়া যাইবে এইরূপ ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্তিমূলক। প্রকৃতপক্ষে অতি অল্প সংখ্যক পুষ্পই বঞ্জন কার্য্যের জন্যই ব্যবহার করা যাইতে পারে। অবং অনেক পুষ্পের ব্যবহারের চেষ্টাও হয়ত হয় নাই এবং হয়ত অনেক পুষ্পেৰ ব্যবহার প্রণালীও অনেকে অবগত নহে! কিন্তু পরীক্ষা দ্বারা বহুস্থলে দেখা গিয়াছে যে অতি উজ্জল বর্ণের পুষ্প হইতে ও বস্ত্রাদি রঞ্জন উপযোগী কোনও রং পাওয়া যায় না । অনেক স্থানে “কেপ্লোটিম" (carotion ) নামে পরিচিত কয়েকটি যৌগিক জৈব পদার্থ বর্তমান থাকায় পুষ্পগুলি উজ্জ্বল পীতবর্ণ দেখায়, কিন্তু কেরোটিন দ্বারা মোটেই বং করা যায় না । এদেশে যে সমস্ত পুষ্প হইতে রং পাওয়া যায় তাহাদিগকে দুইটি সাধারণ শ্রেণীতে বিভক্ত কবা যাইতে পারে (ক) যে সমস্ত পুষ্পের অংশ বিশেষ হইতেই মাত্র রং পাওয়া যায়—(১) পলাশফুল, (১) কুসুমফুল (৩) গেন্দাফুল (৪) শেফালিকা (৫) কুম্কুম্ (৬) মাদারফুল,-উক্ত শ্রেণীব অন্তর্গত। (ঘ) যে সমস্ত পুষ্পের সমস্ত অংশ হইতেই রং পাওয়া যায়—(১) তুনফুল (২) নাইস্কুল, (৩) অম্বাৰ্গ, (৪) পাট, বা পাটোয়া (বক্তজবা জাতীয় একপ্রকার ফুল) শেষোক্ত শ্রেণীর | যে সমস্ত পুষ্পের অংশ বিশেষই মাত্র বঞ্জন কার্যোপোযোগী, নিম্নে এক একটি করিয়া তাহাদের সম্বন্ধে:যতদুপ সম্ভব বিস্তুত আলোচনা করা গেল । পলাশফুল পলাশ, কিংশুক, যঞ্জীয় রক্তপুষ্পক, ক্ষার।শ্ৰেষ্ঠ বাত পোখ, ব্ৰহ্মবৃক্ষ ও সমিস্বর এই কয়েকট এক পৰ্যায়ক শব্দ। পলাশকে হিন্দুস্থানে ঢাক ও » 8Ե- --------- --------- ਿ੧੪ ੲtੋਣੀ এ*দেশে পকূপিন ( Paukpin ) বলে। ইহার čvrstft: “R (Buteа-Froudosa) kki strs ভারতবর্ষীয় বৃক্ষ । আব্রহ্ম ভারতের সর্বত্রই অযত্নে বদ্ধিত অসংখ্য বন্য পলাশবৃক্ষ দেখিতে পাওয়া যায়। ইতিহাস প্রসিদ্ধ পলাশী যুদ্ধক্ষেত্র পূৰ্ব্বে অসংখ্য পলাশবৃক্ষে পরিপূর্ণ ছিল এবং ঐ পুষ্প বৃক্ষের নামমুসারেই উক্ত স্থানের নাম “পলাশী" হইয়াছে। মুর্শিদাবাদেব রঞ্জন শিল্পিগণ পীত বর্ণের রেশম রং করিবার জন্য পলাশী হইতে পূৰ্ব্বে প্রচুর পরিমাণ পলাশফুল সংগ্ৰহ কবিত। বর্তমান ঢাকা নগরী ও পূৰ্ব্বে বহু পলাশ বা ঢাক বৃক্ষ পরিবৃত ছিল ; প্রচলিত একটি প্রবাদ অনুসারে ঢাকবৃক্ষের প্রচুরতা হেতুই এই স্থানের নাম ঢাকা হইয়াছে, এবং নগরের উত্তরাংশে নিবিড় পলাশবনের মধ্যে আবিষ্কৃত ও প্রতিষ্টত দশভূজা দেবী ঢাকেশ্বরী আখ্যা প্রাপ্ত হইয়াছেন। ওযধিরূপে প্রাচীন সংস্কৃত লছ এস্থে পলাশেপু উল্লেখ পাওয়া যায়। পলাশ বৃক্ষগাত্র নিঃস্তত কটু তিক্ত কষায় স্বাদ বিশিষ্ট একপ্রকার নির্য্যাস ধারক ওযপিরূপে আসল বা পিয়াশাল (Indian kind নিৰ্য্যাসেব পরিবর্তে কখনও কখনও ব্যবহৃত হইয়া থাকে। স্যার জর্জ ওয়াটের মতে চেষ্টা করিলে পলাশের বন্ধল বা কাষ্ঠ হইতে খয়েরের স্থায় এক প্রকাৰ কাষায়িন ( Fannin ) নিৰ্য্যাস সংগ্রহ কব! যাইতে পারে । ডেস্ক ( Daymock , রেচক ওষধিরূপে পলাশ বীজ তৈলের উল্লেখ কবিয়াছেন। পলাশ নিশ্বাদিজাতীয় ** (Leguminosae) পলাশফুল একবৰ্ষী, রক্তবর্ণ ও গন্ধহীন । গন্ধহীনতা নিবন্ধন পলাশ-পুষ্পকে গুণ শূণ্য বাহ সৌন্দর্ঘ্যের উপমাস্থল ধরা হইয়া থাকে। শীতের শেষভাগে পলাশফুল ফুটিতে আৰম্ভ করে এবং পুম্পোদগমের সঙ্গে সঙ্গে পত্র সমুহ ক্রমে ঝবিয়া পড়িতে থাকে। তখন পল্লবপত্র শুন্য লোহিত বর্ণ পুষ্প সৌন্দৰ্য্য ধারণ করে। বৌদ্ধগণ পলাশ ফুলকে রক্তাস্বরপরিহিত সংসার ত্যাগী অনুতপ্ত যোগীর সহিত তুলনা করিয়া থাকেন। সপ্তশতকের একট চরণের (Strophe) অর্থ এই যে "বসন্তকালে পৃথিবী পলাশ ফুলে আচ্ছন্ন থাকায় যেন ভিক্ষু দ্বারা বলিয়া প্রতীয়মান হয় ।” উপমাটি অতি শুন্দর নয় কি ?