পাতা:শিশু-ভারতী - ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিশু-ভারতী প্রদেশে ক্ষত্রিয় ইক্ষাকুবংশীয় রাজগণের শাসনাধীন ছিল। পল্লব নামক একটি রাজবংশ কাঞ্চী, অন্ধ্যাপথ, সাতজনী রক্ট (আধুনিক বেলারি জেলা ও তন্নিকটবর্তী দেশসমূহ) ইত্যাদি প্রদেশে স্বীয় আধিপত্য বিস্তাব করিয়াছিল। গুপ্তবংশের প্রতিষ্ঠাতা সামন্তরাজ মহারাজ শ্ৰীগুপ্তের সময়ে মগধেশ্বর কে ছিলেন, তাহা নিশ্চিতরূপে বলা কঠিন। কদম্বরাজ ময়ুর শৰ্ম্মার একটি লেখা হইতে জানা যায় মৌখরি নামক বিখ্যাত রাজবংশের অস্তিত্ব খৃষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর শেষ ভাগেও ছিল। পরবর্তী কালে মোখবি রাজশক্তির কেন্দ্র মগধে ছিল। অতএব হইতে পারে যে, মহারাজ শ্ৰীগুপ্তের প্রভু মৌখরি বংশের কোনও রাজা ছিলেন। মোখবি বংশ ছাড়া আমরা মগধে ভারশিব বা বাকাটক বংশের অতি প্রভুজের কথাও মনে কবিতে পারি। কিন্তু এ বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য কোনই প্রমাণ নাই। কেহ কেহ মনে করেন যে, মহারাজ গুপ্ত জাতিতে অতিশষ হীন ছিলেন। কিন্তু এই অকুমান অমূলক। পরবর্তী কালে গুপ্ত সম্রাটের অন্তান্ত উচ্চবংশের রাজকুলের সহিত বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করিযাছিলেন। যদি তাহারা জাতিতে অতিশয হীন হইবেন, তবে ইহা সম্ভবপর হইত না। মহারাজ গুপ্তের পুত্র মগবাজ ঘটোৎকচগুপ্ত পিতার স্থায় একজন সামান্ত সামস্ত রাজা ছিলেন । মগধ দেশে তাহার প্রভাব-প্রতিপত্তি অধিক ছিল না, কিন্তু অকস্মাৎ ভাগ্যলক্ষ্মী গুপ্তবংশের উপর স্বপ্রসন্ন হইলেন। ঘটোৎকচগুপ্তের পুত্র প্রথম চন্দ্রগুপ্ত ৩২০ খৃষ্টাব্দে সিংহাসনারোহণ করিয়া নিজেকে স্বাধীন বলিয়া ঘোষণা করিয়াছিলেন ও স্বাধীনতা-সূচক ‘মহারাজাধিরাজ" পদবী গ্রহণ করিয়াছিলেন। প্রথম চন্দ্রগুপ্ত হইতেই গুপ্তবংশেব প্রতিষ্ঠাব স্বত্রপাত, কিন্তু এই প্রতিষ্ঠার মূলে ছিল লিচ্ছবি জাতি। এই লিচ্ছবি জাতি প্রাচীন কালে বৈশালী নামক বাজ্যে স্বপ্রতিষ্ঠিত ছিল। বৌদ্ধ ও জৈন ধৰ্ম্মেব উদয়কালে লিচ্ছবি জাতি একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠাসম্পন্ন জাতি ছিল। কিন্তু শিশুনাগবংশীয় রাজ অজাতশত্রুব বাজত্বকাল হইতে আরম্ভ করিয়া দীর্ঘ আটশত বৎসর লিচ্ছবি জাতির কোনও বিশেষ পরিচয় ইতিহাসের পৃষ্ঠায় পাওয়া যায় না। মনে হয় তিব্বতে ও নেপালে তাহাদের শাখা বর্তমান ছিল। প্রথম চন্দ্রগুপ্ত এই লিচ্ছবি জাতির এক বাজকন্যার পাণিগ্রহণ করিয়াছিলেন, র্তাহার নাম কুমারদেবী। এই বিবাহ বন্ধন গুপ্তবংশের ভাবী অদ্ভু্যদয়ের কারণ হইয়াছিল। হইতে পারে যে, পাটলিপুত্র লিচ্ছবি জাতির অধিকারভুক্ত ছিল। কিন্তু কুমারদেবীর বিবাহোপলক্ষে তাহাবা পাটলিপুত্রের স্বামিত্ত্ব চন্দ্রগুপ্তকে সমপণ কবিয়ছিল। যাহা হউক এ বিষয়ে কোনই সন্দেহ নাই যে, গুপ্তবংশীষ রাজগণ এই সম্বন্ধকে অতিশয় সৌভাগ্যের, গোববের ও গৰ্ব্বের বিযয মনে করিতেন। এই বৈবাহিক সম্বন্ধেব স্মরণার্থে কতকগুলি সুবর্ণ মুদ্র অঙ্কিত করা হইয়াছিল। ইহাতে প্রথম দিকে চন্দ্র গুপ্ত ও র্তাহার পত্নী কুমান দেবীর মূৰ্ত্তি ও তাছাদেব নাম অঙ্কিত আছে। অপব দিকে সিংহবাহিনী লক্ষ্মী দেবীর মূৰ্ত্তি ও লিচ্ছবয়ঃ লিখিত আছে। লিচ্ছবয়ঃ পদ ইহাই স্বচিত কবে যে, চন্দ্রগুপ্ত লিচ্ছবি বংশের সহিত সম্বন্ধ স্থাপিত করিয়াই রাজ্য নিৰ্ম্মাণ-কার্য্যে সাফল্য লাভ করিয়াছিলেন। অল্পকাল সিংহাসনে অধিষ্ঠিত থাকিয়াও চন্দ্রগুপ্ত রাজ্য সীমা যথেষ্ট বুদ্ধি কবিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। তাহাব রাজ্য মগধ হইতে প্রধাগ পর্য্যস্ত বিস্তৃত —অর্থাৎ সমগ্র গঙ্গাতটস্থ প্রদেশই রাজ্যের অন্তভূত ছিল। তাছা ছাড়া অযোধ্য প্রভৃতি জনপদও তাহার রাজ্যস্তভূর্ত ছিল। চন্দ্রগুপ্তের রাজ্যভিষেকের সময় হইতে একটি নূতন সংবতের প্রবর্তন হয়। ইতিহাসে এই ংবৎ গুপ্ত সংবৎ বলিয়া প্রসিদ্ধ। পণ্ডিতেবা গণনা করিযা স্থিব করিধাছেন যে, ৩১৯ খৃষ্টাব্দে এই অব্দের আরম্ভ হয। এই অব্দটি অনেককাল যাবৎ প্রচলিত ছিল। গুপ্তবংশের পতনের পর এই সংবৎটি কাঠিয়াবাড় দেশে বলভী সংবৎ নামে প্রসিদ্ধ হইযাছিল। প্রসিদ্ধ মুসলমান জ্যোতিৰ্বিদ tল বারুনির কথামুসাবে শক সংবৎ ( ৭৮ খৃষ্টাব্দ ) ও গুপ্তসংবতের মধ্যে ২৪১ বৎসরের অস্তর ছিল। শক সংবতে ২৪১ বৎসর যোগ করিলে গুপ্তাজের প্রথমবর্ষ ৩১৯-২০ খৃষ্টাব্দ নিরূপিত হয়। }