পাতা:শুভদা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেইদিন রাত্রে জ্যোৎস্না-ধৌত প্ৰশান্ত গঙ্গাবক্ষের উপর দিয়া ভঁাটার স্রোতে গা ভাসাইয়া, ধীরে ধীরে হস্ত সঞ্চালনের মত ছপ ছপা করিয়া দুটি দাড় ফেলিতে ফেলিতে সুরেন্দ্রবাবুৱ প্ৰকাণ্ড বজরা উত্তর হইতে দক্ষিণ দিকে ভাসিয়া আসিতেছিল । ছাদের উপরে সুরেন্দ্ৰবাবু ও জয়াবতী বসিয়া কথোপকথন করিতেছিলেন, নিচে কামরার জানালা খুলিয়া মালতী গঙ্গাবক্ষে ছোট ছোট রাজত ঢেউগুলি গুণিতেছিল। আর চক্ষু মুছিতেছিল। মালতী বুঝিতে পারিল এইবার হলুদপুরে আসিতেছে। আরো কিছুক্ষণ আসিয়া গঙ্গাতীরের অশ্বখ বৃক্ষ দেখিতে পাইল। তাহার পার্শ্বে বাঁধাঘাট চন্দ্ৰকিরণে ধাপ ধাপ করিতেছে তাহাও দেখিল। আর তাহার পশ্চাতে হলুদপুর গ্রাম সুপ্ত নিস্তব্ধ পড়িয়া আছে। মালতী তথাকার প্রত্যেক বাটী, প্ৰত্যেক নরনারীর নিদ্রিত মুখ মানস চক্ষে দেখিতে লাগিল, আর ঐ ঘাট-সে যখন ললনা ছিল,তখন দুবেলা ঐখানে স্নান করিতে, কাপড় কাচিতে, গাত্ৰ ধৌত করিতে আসিত ; ঐ ঘাট হইতে পিত্তল কলসী পূর্ণ করিয়া জল না লইয়া গেলে পান করা, রন্ধন করা চলিত না । মালতী এখন মালতী—সে আর ললনা নহে, তবুও তাহাকে এখনো ভুলিতে পারা যায় না, হারাণ মুখুয্যেকে ভুলিতে পারা যায় না, তাই ভাবিতেছিল। আর কঁদিতেছিল, আর সদাপাগলাকেও সে কিছুতেই ভুলিতে পারিবে না। ইতিপূর্বেই তাহা মালতী ভাবিয়া দেখিয়াছিল। মালতী ভাবিল, ছলনা, বিন্দু, কৃষ্ণপিসীমা, গিরিজায়, শৈলবতী, রমা-কেউ না-কেউ না ; সদানন্দ তাহায় পাগল ক্ষ্যাপা মুখখানা লইয়া স্মৃতির অৰ্দ্ধেক জড়াইয়া