পাতা:শুভদা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8S ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ বাপের ইচ্ছা হইবে না। তাহাও জানিত, কিন্তু খুলিয়া বলিতে পারিল না। তাহার একবার ইচ্ছা হইল জিজ্ঞাসা করে, কে তাহার পিতার মত করিতে যাইবে ? কিন্তু তাহাও বলিল না। শুধু মৌন মুখে কাতর নয়নে তাহার মুখপানে চাহিয়া রহিল। পাগল সে মৌনভাষাও বুঝিল ; বলিল, তাহার পিতার মত আমাদেরই চেষ্টা করে করতে হবে। কারণ বিবাহ ত দিতেই হবে ? শুভদা ভয়ে ভয়ে, আশায় নিরাশায়, অস্ফুটে বলিল, হবে কি ? নিশ্চয় হবে । কেমন করে জানলে ? পাগল আবার একটু হাসিল ; বলিল, আমি তা জানি। আপনি ভাববেন না, এ মত আমি নিশ্চয় করাব । বৃদ্ধ হরমোহনের কিরূপে মত করিতে হইবে সদানন্দ তাহা বিশেষ বিদিত ছিল, মত নিশ্চয় হইবে তাহাও জানিত । শুভদা কিন্তু আর থাকুিতে পারিল না। ছুটিয়া ঘরের ভিতর হইতে দুধ আনিতে গেল ; কিন্তু দুধের বাটি হাতে লইয়া অসাবধানে তাহাতে বড় এক ফোটা চোখের জল মিশাইয়া ফেলিল। অপ্ৰতিভভাবে বাহিরে আসিয়া কহিল, সদানন্দ, বস, ও-ঘর থেকে দুধটা বদলে নিয়ে আসি । ও-ঘরে আসিয়া, দুগ্ধের কড়ায় হাত রাখিয়া শুভদা আরো একটু কঁাদিয়া লইল, সাবধান হইয়া আরো দুই-চারিটা বড় বড় ফোটা মুক্তিকার উপর ফেলিল, তাহার পর চক্ষু মুছিয়া দুগ্ধ ঢালিতে লাগিল। শুভদ কঁদিল বটে, কিন্তু তাহ অন্তৰ্ভেদী রক্তবিন্দু নহে ; বরং অসম্ভব আনন্দাশ্রু ; লপনার শোকের এক ফোটা জল ; স্বামীর বেদনার একবিন্দু বারি! আহার সমাপন করিয়া সদানন্দ মাঠপানে চলিল। সেখানে তাহার ক্ষেত আছে, কৃষাণ কাজ করে, গরু বাছুর চরিয়া বেড়ায়-সেখানে