পাতা:শুভদা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

》 SWR এবং শ্বেত প্রস্তরের ঝরণা। তদুপরি স্থাপিত রহিয়াছে ; চতুর্দিকে শ্বেত কৃষ্ণ পীত বর্ণের। মনুষ্য প্ৰতিকৃতি সে আলোকে জীবন্ত বোধ হইতেছে। এই রাজ্যোচিত হৰ্ম্ম্যে মালতী-জীবন্ত স্বৰ্ণ-প্ৰতিমা-একাকী বসিয়া আছে। কত রূপে যে এ পার্থিব সৌন্দৰ্য্য সহস্ৰ গুণ বৃদ্ধি করিয়া সে বসিয়া আছে, আত্মবিস্মৃত হইয়া মুগ্ধ নয়নে সে শোভা দেখিবার জন্য সেখানে আর কেহ ছিল না, তাই মালতী আপন মনে পুস্তক পাঠ করিতেছে। পাঠ আর ছাই করিতেছে ; ছত্রের পর ছত্র সরিয়া যাইতেছে, পাতার পর পাতা উল্টাইয়া যাইতেছে কিন্তু এক বৰ্ণও মনের ভিতর প্রবেশ করিতেছে না। সে ইতিপূর্বেই বোধ হয় কঁাদিতেছিল, কেননা শুষ্ক জলের দাগ এখনও তাহার কাপোলের উপর প্রতীয়মান হইতেছে। এ সুখ-ভবনে সে কেন যে কঁদিতেছিল তাহা জানি না, কিন্তু কঁাদিতেছিল তাহ নিশ্চয় ; এবং সেই কান্নাই থামাইবার জন্য পুস্তকের সাহায্য গ্ৰহণ করিয়াছিল। মালতী নিরাভরণা, মালতী সামান্য বস্ত্ৰ পরিহিতা, মালতী কঁাদিতেছিল, মালতীর, মনে সুখ নাই। পুস্তক বোর্ডের উপর বন্ধ করিয়া ফেলিয়া দিল, নিঃশব্দে কোঁচের বাজুতে মস্তক ন্যস্ত করিয়া বসিয়া, রহিল। পুনর্বাের চক্ষে জল আসিয়া পড়িল, এবার তাহা রোধ করিবার প্রয়াস করিল না। কাজেই একটির পর একটি করিয়া অশ্রু কোচের মখমল চাদরের উপর আসিয়া পড়িতে লাগিল । বহুক্ষণ পরে সুরেন্দ্রনাথ কক্ষে প্ৰবেশ করিলেন ; অত পুরু গালিচার উপর পাদশব্দ হয় না। কাজেই এ আগমন মালতী জানিতে পারিল না, সে যেমন কঁাদিতেছিল। তেমনই কঁাদিতে লাগিল । সুরেন্দ্ৰনাথ নিস্তন্ধে তাহা দাড়াইয়া দেখিতে লাগিল। কিছুক্ষণ পরে আরো একটু নিকটে আসিয়া দাড়াইলেন, তাহার পর ডাকিলেন, মালতী ! মালতী চমকিয়া চাহিয়া দেখিল ; বলিল, এসে ।