পাতা:শুভাশুভ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

টাকা গুণে দিতে দিতে আপশোষ করে বলে, বাড়ি একটা করতাম। এতবড় না হলেও ছোটখাট একটা বাড়ি তোলার মত পয়সা কি আর করিনি এতকাল চাকরী করে ? তুমি ছেলেমানুষ, তুমি ঠিক বুঝবে না-ছেলেমেয়ে কটার জন্য বাড়ি করতে সাহস পাই না । মারামাবি কাটাকাটি করবে বৈ তো নয়। তার চেযে মরার আগে নগদ টাকা ভাগ কবে দিয়ে যাব-যে যার পথ দেখবে। দোতলা বাডিতে যে মানুষগুলি ভিড করে ছিল তারা গাদাগাদি করে সম্বল করেছে শুধু একতলাটা । দম যেন আটকে আসতে চায় সকলের। নিজেব ঘরটিও ছেড়ে দিতে হযেছে সমরেশকে । খাট আর চেয়ার টেবিলটা রাখার ঠাইটুকু শুধু জুটেছে-টেবিল চেয়ার সরে গেছে কোণের দিকে ঠেলে দেওয়া খাটের মাথার কাছে । একান্তে প্ৰাণখুলে দুটাে কথা বলার সুযোগ নেই, সুমিত্র। তবু আজকাল ঘন ঘন আসা যাওয়া শুরু করেছে । সমরেশ যখন বাড়ি থাকবে জানা কথা তখনই অবশ্য সে আসে-সমরেশের সঙ্গেই সে বেশীর ভাগ কথাবার্তা চালায়। সমরেশ খাটে বসলে সে বসে খাটের এ মাথায় সরানো অনেক দামী পুরানো ভাঙ্গা চেয়ারটায়, সমরেশ ওই চেয়ারে বসে থাকলে সে বসে ভিতরের মালমশলা খসতে শুরু-করা সেকেলে মোট গদির বিছানায় । সুমিত্ৰা আসে, সকলের সঙ্গে ভদ্রত রক্ষা করে সমরেশের সঙ্গে আলাপ চালায়-সেজন্য বাড়ির মানুষরা বিরক্ত বা ভীত হয় না । তারা বরং চায় যে সুমিত্ৰা এসে যত খুন্সী আরও বেশী ভাব জমাক সমরেশের সঙ্গে । বাড়াবাড়ি করলে সমরেশ চটে যাবে, নইলে বাড়ির সকলে হয় তো খোলা ছাদে গিয়ে ভিড় করে দাড়িয়ে থেকে তাদের নির্জনে মেলামেশার সুযোগ করে দিত । সুমিত্ৰাকেই বিয়ে করুক সমরেশ । SVG