পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আলাপের পথে ওর এত দুঃসাহস। তাই অতি সহজেই সকলের সঙ্গে ও ভাব করতে পারে—— নিকটে দাহ্যবস্তু থাকলেও ওর তরফে আগ্নেয়তা নিরাপদে সুরক্ষিত।

 সেদিন পিক্‌নিকে গঙ্গার ধারে যখন ওপারের ঘন কালো পুঞ্জীভূত স্তব্ধতার উপরে চাঁদ উঠল, ওর পাশে ছিল লিলি গাঙ্গুলি। তাকে ও মৃদুস্বরে বললে, ‘গঙ্গার ওপারে ওই নতুন চাঁদ, আর এপারে তুমি আর আমি, এমন সমাবেশটি অনন্ত কালের মধ্যে কোনোদিনই আর হবে না।’

 প্রথমটা লিলি গাঙ্গুলির মন এক মুহূর্তে ছল্‌ছলিয়ে উঠেছিল, কিন্তু সে জানত এ কথাটায় যতখানি সত্য সে কেবল ওই বলার কায়দাটুকুর মধ্যেই। তার বেশি দাবি করতে গেলে বুদ্‌বুদের উপরকার বর্ণচ্ছটাকে দাবি করা হয়। তাই নিজেকে ক্ষণকালের ঘোর-লাগা থেকে ঠেলা দিয়ে লিলি হেসে উঠল; বললে, ‘অমিট্, তুমি যা বললে সেটা এত বেশি সত্য যে না বললেও চলত। এইমাত্র যে ব্যাঙটা টপ করে জলে লাফিয়ে পড়ল এটাও তো অনন্ত কালের মধ্যে আর কোনোদিন ঘটবে না।’

 অমিত হেসে উঠে বললে, ‘তফাত আছে লিলি, একেবারে অসীম তফাত। আজকের সন্ধ্যাবেলায় ওই ব্যাঙের লাফানোটা একটা খাপছাড়া ছেঁড়া জিনিস। কিন্তু তোমাতে আমাতে, চাঁদেতে, গঙ্গার ধারায়, আকাশের তারায়, একটা সম্পূর্ণ ঐকতানিক সৃষ্টি—— বেটোফেনের চন্দ্রালোকগীতিকা। আমার

১৩