পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

করতে লাগল অমিতকে এখনই সেই প্রণামটি করে বলে, ‘তুমি আমাকে ধন্য করেছ।’ কিন্তু সে আর হল না।

 বাসার কাছাকাছি আসতেই অমিত বললে, ‘বন্যা, আজ তোমার শেষ কথাটি একটি কবিতায় বলল, তা হলে সেটা মনে করে নিয়ে যাওয়া সহজ হবে। তোমার নিজের যা মনে আছে এমন একটা-কিছু আমাকে শুনিয়ে দাও।’

 লাবণ্য একটুখানি ভেবে আবৃত্তি করলে—

‘তোমারে দিই নি সুখ, মুক্তির নৈবেদ্য গেনু রাখি
রজনীর শুভ্র অবসানে। কিছু আর নাই বাকি,
নাইকো প্রার্থনা, নাই প্রতি মুহূর্তের দৈন্যরাশি,
নাই অভিমান, নাই দীন কান্না, নাই গর্বহাসি,
নাই পিছু-ফিরে দেখা। শুধু সে মুক্তির ডালাখানি
ভরিয়া দিলাম আজি আমার মহৎ মৃত্যু আনি।’

 ‘বন্যা, বড়ো অন্যায় করলে। আজকের দিনে তোমার মুখে বলবার কথা এ নয়, কিছুতেই নয়। কেন এটা তোমার মনে এল? তোমার এ কবিতা এখনই ফিরিয়ে নাও।’

 ‘ভয় কিসের মিতা? এই আগুনে-পোড়া প্রেম এ সুখের দাবি করে না, এ নিজে মুক্ত বলেই মুক্তি দেয়, এর পিছনে ক্লান্তি আসে না, ম্লানতা আসে না; এর চেয়ে আর কিছু কি দেবার আছে?’

 ‘কিন্তু আমি জানতে চাই, এ কবিতা তুমি পেলে কোথায়?’

 ‘রবি ঠাকুরের।’

 ‘তার তো কোনো বইয়ে এটা দেখি নি।’

১২০