পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লাগিয়ে লাগিয়ে তার আলোটাকে ময়লা করে ফেলে।'

 ‘দেখো মিতা, মেয়েদের ভালো-লাগা তার আদরের জিনিসকে আপন অন্দর-মহলে একলা নিজেরই করে রাখে, ভিড়ের লোকের কোনো খবরই রাখে না। সে যত দাম দিতে পারে সব দিয়ে ফেলে, অন্য পাঁচজনের সঙ্গে মিলিয়ে বাজার যাচাই করতে তার মন নেই।'

 ‘তা হলে আমারও আশা আছে বন্যা। আমার বাজারদরের ছোট্ট একটা ছাপ লুকিয়ে ফেলে তোমার আপন দরের মস্ত একটা মার্কা নিয়ে বুক ফুলিয়ে বেড়াব।'

 ‘আমাদের বাড়ি কাছে এসে পড়ল মিতা। এবার তোমার মুখে তোমার পথশেষের কবিতাটা শুনে নিই।'

 'রাগ কোরো না বন্যা, আমি কিন্তু রবি ঠাকুরের কবিতা আওড়াতে পারব না।'

 'রাগ করব কেন?'

 ‘আমি একটি লেখককে আবিষ্কার করেছি, তার স্টাইল—'

 ‘তার কথা তোমার কাছে বরাবরই শুনতে পাই। কোলকাতায় লিখে দিয়েছি তার বই পাঠিয়ে দেবার জন্যে।'

 ‘সর্বনাশ! তার বই। সে লোকটার অন্য অনেক দোষ আছে, কিন্তু কখনো বই ছাপতে দেয় না। তার পরিচয় আমার কাছ থেকেই তোমাকে ক্রমে ক্রমে পেতে হবে। নইলে হয়তো—'

 ‘ভয় কোরো না মিতা, তুমি তাকে যে ভাবে বোঝ আমিও তাকে সেই ভাবেই বুঝে নেব এমন ভরসা আমার আছে। আমারই জিত থাকবে।'

১২৩