পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কাছে একটা বাড়ি খালি আছে। যদি নিতান্ত না পাওয়া যায় আমার এখানে কি একরকম করে জায়গা হবে না?'

 'সেজন্যে ভাবনা নেই মাসি! তারা নিজেরাই টেলিগ্রাফ করে হোটেলে জায়গা ঠিক করেছে।'

 ‘আর যাই হোক বাবা, তোমার বোনেরা এসে যে দেখবে তুমি ওই লক্ষ্মীছাড়া বাড়িটাতে আছ সে কিছুতেই হবে না। তারা আপন লোকের খ্যাপামির জন্যে দায়িক করবে আমাদেরকেই।'

 ‘না মাসি, আমার প্যারাডাইস লস্ট। ওই নগ্ন আসবাবের স্বর্গ থেকে আমার বিদায়। সেই দড়ির খাটিয়ার নীড় থেকে আমার সুখস্বপ্নগুলো উড়ে পালাবে। আমাকেও জায়গা নিতে হবে সেই অতিপরিচ্ছন্ন হোটেলের এক অতিসভ্য কামরায়।'

 কথাটা বিশেষ কিছু নয়, তবু লাবণ্যর মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল। এতদিন একটা কথা ওর মনেও আসে নি যে, অমিতর যে সমাজ সে ওদের সমাজ থেকে সহস্র যোজন দূরে। এক মুহূর্তেই সেটা বুঝতে পারলে। অমিত যে আজ কোলকাতায় চলে যাচ্ছিল তার মধ্যে বিচ্ছেদের কঠোর মূর্তি ছিল না। কিন্তু এই-যে আজ ও হোটেলে যেতে বাধ্য হল এইটেতেই লাবণ্য বুঝলে, যে বাসা এতদিন ওরা দুজনে নানা অদৃশ্য উপকরণে গড়ে তুলছিল সেটা কোনোদিন বুঝি আর দৃশ্য হবে না।

 'লাবণ্যর দিকে একটু চেয়ে অমিত যোগমায়াকে বললে, ‘আমি হোটেলেই যাই আর জাহান্নমেই যাই, কিন্তু এইখানেই আমার আসল বাসা।'

১৩৩