পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তার পরে শেষ সাধনার কথা বল নি, সেটা হচ্ছে ত্যাগের।’

 ‘বন্যা, ওটা তোমাদের রবি ঠাকুরের কথা; সে লিখেছে, শাজাহান আজ তার তাজমহলকেও ছাড়িয়ে গেল। একটা কথা তোমার কবির মাথায় আসে নি যে, আমরা তৈরি করি তৈরি জিনিসকে ছাড়িয়ে যাবার জন্যেই। বিশ্বসৃষ্টিতে ওইটেকেই বলে এভোল্যুশন। একটা অনাসৃষ্টি-ভূত ঘাড়ে চেপে থাকে, বলে ‘সৃষ্টি করো’; সৃষ্টি করলেই ভূত নামে তখন সৃষ্টিটাকেও আর দরকার থাকে না। কিন্তু তাই ব’লে ওই ছেড়ে যাওয়াটাই চরম কথা নয়। জগতে শাজাহান-মমতাজের অক্ষয় ধারা বয়ে চলেছেই— ওরা কি একজন মাত্র? সেই জন্যেই তো তাজমহল কোনোদিন শূন্য হতেই পারল না। নিবারণ চক্রবর্তী বাসরঘরের উপর একটা কবিতা লিখেছে। সেটা তোমাদের কবিবরের তাজমহলের সংক্ষিপ্ত উত্তর, পোস্টকার্ডে লেখা—

তোমারে ছাড়িয়ে যেতে হবে
রাত্রি যবে
উঠিবে উন্মনা হয়ে প্রভাতের রথচক্ররবে।
হায় রে বাসরঘর,
বিরাট বাহির সে যে বিচ্ছেদের দস্যু ভয়ংকর।
তবু সে যতই ভাঙেচোরে,
মালাবদলের হার যত দেয় ছিন্ন ছিন্ন ক’রে,
তুমি আছ ক্ষয়হীন
অনুদিন;

১৩৬