পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তবু সান্‌ডে-স্কুলের বিধানমত ফল ফলল না, দণ্ডদাতা আপনাদের কোনো দণ্ডই দিলেন না, শক্ত পথের মধুও একজন এক চুমুকেই খেয়ে নিলেন, আর অজানাকেও একজন এক দৃষ্টিতে জানলেন— এখন কেবল আমার ভাগ্যেই হার হবে? দেখো তো সিসি, কী অন্যায়!'

 সিসির আবার সেই উচ্চহাসি। ট্যাবি-কুকুরটাও এই উচ্ছ্বাসে যোগ দেওয়া তার সামাজিক কর্তব্য মনে করে বিচলিত হবার লক্ষণ দেখালে। তৃতীয়বার তাকে দমন করা হল।

 কেটি বললে, ‘অমিট, তুমি জান, এই হীরের আংটি যদি হারি জগতে আমার সান্ত্বনা থাকবে না। এ আংটি একদিন তুমিই দিয়েছিলে। এক মুহূর্ত হাত থেকে খুলি নি, এ আমার দেহের সঙ্গে এক হয়ে গেছে। শেষকালে আজ এই শিলঙ পাহাড়ে কি একে বাজিতে খোওয়াতে হবে?'

 সিসি বললে, 'বাজি রাখতে গেলে কেন ভাই!'

 'মনে মনে নিজের উপর অহংকার ছিল, আর মানুষের উপর ছিল বিশ্বাস। অহংকার ভাঙল, এবারকার মতো আমার রেস ফুরোল, আমারই হার। মনে হচ্ছে অমিটকে আর রাজি করতে পারব না। তা, এমন অদ্ভুত করেই যদি হারাবে সেদিন এত আদরে আংটি দিয়েছিলে কেন? সে দেওয়ার মধ্যে কি কোনো বাঁধন ছিল না? এই দেওয়ার মধ্যে কি কথা ছিল না যে, আমার অপমান কোনোদিন তুমি ঘটতে দেবে না?'

 বলতে বলতে কেটির গলা ভার হয়ে এল, অনেক কষ্টে চোখের জল সামলে নিলে।

১৬৫