পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এল যেখানে বনের মধ্যে হঠাৎ একটুখানি ফাঁক। একটি তরুশুন্য পাহাড়ের শিখরের উপর সূর্য আপনার শেষ স্পর্শ ঠেকিয়ে নেমে গেল। অতি সুকুমার সবুজের আভা আস্তে আস্তে সুকোমল নীলে গেল মিলিয়ে। দুজনে থেমে সে দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল।

 লাবণ্য আস্তে আস্তে বললে, একদিন একজনকে যে আংটি পরিয়েছিলে, আমাকে দিয়ে আজ সে আংটি খোলালে কেন?'

 অমিত ব্যথিত হয়ে বললে, তোমাকে সব কথা বোঝাব কেমন করে বন্যা? সেদিন যাকে আংটি পরিয়েছিলুম আর যে আজ সেটা খুলে দিলে তারা দুজনে কি একই মানুষ?'

 লাবণ্য বললে, 'তাদের মধ্যে একজন সৃষ্টিকর্তার আদরে তৈরি, আর-একজন তোমার অনাদরে গড়া।'

 অমিত বললে, ‘কথাটা সম্পূর্ণ ঠিক নয়। যে আঘাতে আজকের কেটি তৈরি, তার দায়িত্ব কেবল আমার একলার নয়।'

 ‘কিন্তু মিতা, নিজেকে যে একদিন সম্পূর্ণ তোমার হাতে উৎসর্গ করেছিল তাকে তুমি আপনার করে রাখলে না কেন? যে কারণেই হোক, আগে তোমার মুঠো আলগা হয়েছে, তার পরে দশের মুঠোর চাপ পড়েছে ওর উপরে, ওর মূর্তি গেছে বদলে। তোমার মন একদিন হারিয়েছে বলেই দশের মনের মতো করে নিজেকে সাজাতে বসল। আজ তো দেখি ও বিলিতি দোকানের পুতুলের মতো; সেটা সম্ভব হত না যদি

১৭০