পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ‘তোমার কথা ঠিক বুঝছি কি না সেইটেই বুঝতে পারি নে। আর-একটু স্পষ্ট করে বলো অমিতদা।'

 অমিত বললে, 'একদিন আমার সমস্ত ডানা মেলে পেয়েছিলুম আমার ওড়ার আকাশ; আজ আমি পেয়েছি আমার ছোট্টো বাসা, ডানা গুটিয়ে বসেছি। কিন্তু আমার আকাশও রইল।'

 ‘কিন্তু বিবাহে তোমার ওই সঙ্গ-আসঙ্গ কি একত্রেই মিলতে পারে না?'

 ‘জীবনে অনেক সুযোগ ঘটতে পারে, কিন্তু ঘটে না। যে মানুষ অর্ধেক রাজত্ব আর রাজকন্যা একসঙ্গেই মিলিয়ে পায় তার ভাগ্য ভালো; যে তা না পায়, দৈবক্রমে তার যদি ডান দিক থেকে মেলে রাজত্ব আর বাঁ দিক থেকে মেলে রাজকন্যা, সেও বড়ো কম সৌভাগ্য নয়।'

 'কিন্তু—'

 ‘কিন্তু তুমি যাকে মনে কর রোম্যান্‌স্‌ সেইটেতে কমতি পড়ে! একটুও না। গল্পের বই থেকেই রোম্যান্‌সের বাঁধা বরাদ্দ ছাঁচে ঢালাই করে জোগাতে হবে নাকি? কিছুতেই না। আমার রোম্যান্‌স্‌ আমিই সৃষ্টি করব। আমার স্বর্গেও রয়ে গেল রোম্যান্‌স্‌, আমার মর্তেও ঘটাব রোম্যান্‌স্‌। যারা ওর একটাকে বাঁচাতে গিয়ে আর-একটাকে দেউলে করে দেয় তাদেরই তুমি বল রোম্যাণ্টিক। তারা হয় মাছের মতো জলে সাঁতার দেয়, নয় বেড়ালের মতো ডাঙায় বেড়ায়, নয় বাদুড়ের মতো আকাশে ফেরে। আমি রোম্যান্‌সের পরমহংস। ভালোবাসার সত্যকে আমি একই শক্তিতে জলে-স্থলেও উপলব্ধি করব,

১৭৮