বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

সংঘাত

অমিত বেছে বেছে শিলঙ পাহাড়ে গেল। তার কারণ, সেখানে ওর দলের লোক কেউ যায় না। আরো একটা কারণ, এখানে কন্যাদায়ের বন্যা তেমন প্রবল নয়। অমিতর হৃদয়টার ’পরে যে দেবতা সর্বদা শরসন্ধান করে ফেরেন তার আনাগোনা ফ্যাশানেব্‌ল্ পাড়ায়। দেশের পাহাড়-পর্বতে যত বিলাসী বস‌্তি আছে তার মধ্যে শিলঙে এদের মহলে তার টার্গেট-প্র্যাক‌্টিসের জায়গা সব চেয়ে সংকীর্ণ। বোনেরা মাথা ঝাঁকানি দিয়ে বললে, ‘যেতে হয় একলা যাও, আমরা যাচ্ছি নে।’

  বাঁ হাতে হাল কায়দার বেঁটে ছাতা, ডান হাতে টেনিস ব্যাট, গায়ে নকল পারসিক শালের ক্লোক প’রে বোনরা গেল চলে দার্জিলিঙে। বিমি বোস আগেভাগেই সেখানে গিয়েছে। যখন ভাইকে বাদ দিয়ে বোনদের সমাগম হল তখন সে চার দিকে চেয়ে আবিষ্কার করলে, দার্জিলিঙে জনতা আছে, মানুষ নেই।

 অমিত সবাইকে বলে গিয়েছিল সে শিলঙে যাচ্ছে নির্জনতা ভোগের জন্যে; দুদিন না যেতেই বুঝলে জনতা না থাকলে নির্জনতার স্বাদ মরে যায়। ক্যামেরা হাতে দৃশ্য দেখে বেড়ায় শখ অমিতর নেই। সে বলে, ‘আমি টুরিস্ট্‌ না; মন দিয়ে চেখে খাবার ধাত আমার, চোখ দিয়ে গিলে খাবার ধাত একেবারেই নয়।’

২৮