পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 অমিত গাড়িতে টুপিটা খুলে রেখে তার সামনে চুপ করে এসে দাঁড়াল। যেন একটা পাওনা শাস্তির অপেক্ষায়। তাই দেখে মেয়েটির বুঝি দয়া হল, একটু কৌতুকও বোধ করলে। অমিত মৃদুস্বরে বললে, ‘অপরাধ করেছি।'

 মেয়েটি হেসে বললে, ‘অপরাধ নয়, ভুল। সেই ভুলের শুরু আমার থেকেই।’

 উৎসজলের যে উচ্ছলতা ফুলে ওঠে, মেয়েটির কণ্ঠস্বর তারই মতো নিটোল। অল্প বয়সের বালকের গলার মতো মসৃণ এবং প্রশস্ত। সেদিন ঘরে ফিরে এসে অমিত অনেকক্ষণ ভেবেছিল এর গলার সুরে যে একটি স্বাদ আছে, স্পর্শ আছে তাকে বর্ণনা করা যায় কী করে। নোটব‌ইখানা খুলে লিখলে, ‘এ যেন অম্বুরি তামাকের হালকা ধোঁওয়া, জলের ভিতর দিয়ে পাক খেয়ে আসছে—— নিকোটিনের ঝাঁঝ নেই, আছে গোলাপজলের স্নিগ্ধ গন্ধ।’


 মেয়েটি নিজের ত্রুটি ব্যাখ্যা করে বললে, ‘একজন বন্ধু আসার খবর পেয়ে খুঁজতে বেরিয়েছিলুম। এই রাস্তায় খানিকটা উঠতেই শোফার বলেছিল, এ রাস্তা হতে পারে না। তখন শেষ পর্যন্ত না গিয়ে ফেরবার উপায় ছিল না, তাই উপরে চলেছিলেম। এমন সময় উপরওয়ালার ধাক্কা খেতে হল।’

 অমিত বললে, ‘উপরওয়ালার উপরেও উপরওয়ালা আছে একটা অতি কুশ্রী কুটিল গ্রহ, এ তারই কুকীর্তি।’

৩২