পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নীল আকাশের উপরে সৃষ্টির কোন্-এক প্রচণ্ড ধাক্কায় যেমন সূর্য-নক্ষত্রের আগুন-জ্বলা ছাপ।

 মুখে কথা না বলে মেয়েটি গাড়িতে উঠে বসল। তার নির্দেশমত গাড়ি পৌঁছল যথাস্থানে। মেয়েটি গাড়ি থেকে নেমে বললে, ‘কাল যদি আপনার সময় থাকে একবার এখানে আসবেন, আমাদের কর্তামার সঙ্গে আপনার আলাপ করিয়ে দেব।’

 অমিতর ইচ্ছে হল বলে, ‘আমার সময়ের অভাব নেই, এখনই আসতে পারি।’ সংকোচে বলতে পারলে না।

 বাড়ি ফিরে এসে ওর নোটবই নিয়ে লিখতে লাগল, ‘পথ আজ হঠাৎ এ কী পাগলামি করলে। দু জনকে দু জায়গা থেকে ছিঁড়ে এনে আজ থেকে হয়তো এক রাস্তায় চালান করে দিলে। অ্যাস্ট্রনমার ভুল বলেছে। অজানা আকাশ থেকে চাঁদ এসে পড়েছিল পৃথিবীর কক্ষপথে—— লাগল তাদের মোটরে মোটরে ধাক্কা, সেই মরণের তাড়নার পর থেকে যুগে যুগে দুজনে একসঙ্গেই চলেছে। এর আলো ওর মুখে পড়ে, ওর আলো এর মুখে। চলার বাঁধন আর ছেঁড়ে না। মনের ভিতরটা বলছে, আমাদের শুরু হল যুগল-চলন, আমরা চলার সূত্রে গাঁথব ক্ষণে-ক্ষণে-কুড়িয়ে-পাওয়া উজ্জ্বল নিমেষগুলির মালা। বাঁধা মাইনেয় বাধা খোরাকিতে ভাগ্যের দ্বারে প’ড়ে থাকবার জো রইল না; আমাদের দেনাপাওনা সবই হবে হঠাৎ।’

 বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। বারান্দায় ঘন ঘন পায়চারি করতে করতে অমিত মনে মনে বলে উঠল, ‘কোথায় আছ নিবারণ

৩৪