পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লাবণ্য-পুরাবৃত্ত

লাবণ্যর বাপ অবনীশ দত্ত এক পশ্চিমি কালেজের অধ্যক্ষ। মাতৃহীন মেয়েকে এমন করে মানুষ করেছেন যে, বহু পরীক্ষাপাসের ঘষাঘষিতেও তার বিদ্যাবুদ্ধিতে লোকসান ঘটাতে পারে নি। এমন-কি, এখনো তার পাঠানুরাগ রয়েছে প্রবল।

 বাপের একমাত্র শখ ছিল বিদ্যায়। মেয়েটির মধ্যে তাঁর সেই শখটির সম্পূর্ণ পরিতৃপ্তি হয়েছিল। নিজের লাইব্রেরির চেয়েও তাকে ভালোবাসতেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল জ্ঞানের চর্চায় যার মনটা নিরেট হয়ে ওঠে, সেখানে উড়ো ভাবনার গ্যাস নীচে থেকে ঠেলে ওঠবার মতো সমস্ত ফাটল মরে যায়, সে মানুষের পক্ষে বিয়ে করবার দরকার হয় না। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস যে, তাঁর মেয়ের মনে স্বামীসেবা-আবাদের যোগ্য যে নরম জমিটুকু বাকি থাকতে পারত সেটা গণিতে ইতিহাসে সিমেণ্ট করে গাঁথা হয়েছে—— খুব মজবুত পাকা মন যাকে বলা যেতে পারে—— বাইরে থেকে আঁচড় লাগলে দাগ পড়ে না। তিনি এত দূর পর্যন্ত ভেবে রেখেছিলেন যে, লাবণ্যর নাই-বা হল বিয়ে, পাণ্ডিত্যের সঙ্গেই চিরদিন নয় গাঁঠ-বাঁধা হয়ে থাকল।

 তাঁর আর-একটি স্নেহের পাত্র ছিল। তার নাম শোভন-লাল। অল্প বয়সে পড়ার প্রতি এত মনোযোগ আর-কারো দেখা যায় না। প্রশস্ত কপালে, চোখের ভাবের স্বচ্ছতায়, ঠোঁটের ভাবের সৌজন্যে, হাসির ভাবের সরলতায়, মুখের ভাবের

৪১