পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

রকমের নাম সৃষ্টি করবার সময় উপস্থিত হয় না? কল্পনা করুননা, যেন এখনই প্রাণ খুলে গলা ছেড়ে আপনাকে ডাক দিয়েছি— নামের ডাক বনে বনে ধ্বনিত হল, আকাশের ওই রঙিন মেঘের কাছ পর্যন্ত পৌঁছল, সামনের ওই পাহাড়টা তাই শুনে মাথায় মেঘ মুড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল; মনে ভাবতেও কি পারেন সেই ডাকটা মিস ডাট্‌?’

 লাবণ্য কথাটাকে এড়িয়ে বললে, ‘নামকরণে সময় লাগে, আপাতত বেড়িয়ে আসি গে।’

 অমিত তার সঙ্গ নিয়ে বললে, ‘চলতে শিখতেই মানুষের দেরি হয়, আমার হল উল্টো; এতদিন পরে এখানে এসে তবে বসতে শিখেছি। ইংরেজিতে বলে, গড়ানে পাথরের কপালে শেওলা জোটে না; সেই ভেবেই অন্ধকার থাকতে কখন থেকে পথের ধারে বসে আছি। তাই তো ভোরের আলো দেখলুম।’

 লাবণ্য কথাটাকে তাড়াতাড়ি চাপা দিয়ে জিজ্ঞাসা করলে, ‘ওই সবুজ-ডানাওয়ালা পাখিটার নাম জানেন?’

 অমিত বললে, ‘জীবজগতে পাখি আছে সেটা এতদিন সাধারণভাবেই জানতুম, বিশেষভাবে জানবার সময় পাই নি। এখানে এসে আশ্চর্য এই যে, স্পষ্ট জানতে পেরেছি পাখি আছে, এমন-কি তারা গানও গায়।’

 লাবণ্য হেসে উঠে বললে, ‘আশ্চর্য!’

 অমিত বললে, ‘হাসছেন? আমার গভীর কথাতেও গাম্ভীর্য রাখতে পারি নে। ওটা মুদ্রাদোষ। আমার জন্মলগ্নে আছে

৬০