পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চাঁদ, ওই গ্রহটি কৃষ্ণচতুর্দশীর সর্বনাশা রাত্রেও একটুখানি মুচকে না হেসে মরতেও জানে না।’

 লাবণ্য বললে, ‘আমাকে দোষ দেবেন না। বোধ হয় পাখিও যদি আপনার কথা শুনত হেসে উঠত।’

 অমিত বললে, ‘দেখুন, আমার কথা লোকে হঠাৎ বুঝতে পারে না বলেই হাসে, বুঝতে পারলে চুপ করে বসে ভাবত। আজ পাখিকে নতুন করে জানছি, এ কথায় লোকে হাসছে। কিন্তু এর ভিতরের কথাটা হচ্ছে এই যে, আজ সমস্তই নতুন করে জানছি, নিজেকেও। এর উপরে তো হাসি চলে না। ওই দেখুন-না, কথাটা একই, অথচ এইবার আপনি একেবারেই চুপ।’

 লাবণ্য হেসে বললে, ‘আপনি তো বেশিদিনের মানুষ না, খুবই নতুন, আরো-নতুনের ঝোঁক আপনার মধ্যে আসে কোথা থেকে?’

 ‘এর জবাবে খুব একটা গম্ভীর কথাই বলতে হল যা চায়ের টেবিলে বলা চলে না। আমার মধ্যে নতুন যেটা এসেছে সেটাই অনাদি কালের পুরোনো— ভোরবেলাকার আলোর মতোই সে পুরোনা, নতুন-ফোটা ভুইচাঁপা ফুলেরই মতো, চিরকালের জিনিস, নতুন করে আবিষ্কার।’

 কিছু না বলে লাবণ্য হাসলে।

 অমিত বললে, ‘আপনার এবারকার এই হাসিটি পাহারা-ওয়ালার চোর-ধরা গোল লণ্ঠনের হাসি। বুঝেছি, আপনি যে-কবির ভক্ত তার বই থেকে আমার মুখের এ কথাটা আগেই

৬১