পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ‘ওই নীচে গাছতলায় যেখানে নানা রঙের ছ্যাৎলা-পড়া পাথরটার নীচে দিয়ে একটুখানি জল ঝির ঝির করে বয়ে যাচ্ছে ওইখানে বসবেন আসুন।’

 লাবণ্য হাতে-বাঁধা ঘড়িটার দিকে চেয়ে বললে, ‘কিন্তু সময় যে অল্প।’

 ‘জীবনে সেইটেই তো শোচনীয় সমস্যা লাবণ্যদেবী, সময় অল্প। মরুপথের সঙ্গে আছে আধ-মশক মাত্র জল, যাতে সেটা উছলে উছলে শুকনো ধুলোয় মারা না যায় সেটা নিতান্তই করা চাই। সময় যাদের বিস্তর তাদেরই পাঙ্ক্‌চুয়াল হওয়া শোভা পায়। দেবতার হাতে সময় অসীম; তাই ঠিক সময়টিতে সূর্য ওঠে, ঠিক সময়ে অস্ত যায়। আমাদের মেয়াদ অল্প, পাঙ্ক্‌চুয়াল হতে গিয়ে সময় নষ্ট করা আমাদের পক্ষে অমিতব্যয়িতা। অমরাবতীর কেউ যদি প্রশ্ন করে ‘ভবে এসে করলে কী’ তখন কোন্ লজ্জায় বলব ‘ঘড়ির কাঁটার দিকে চোখ রেখে কাজ করতে করতে জীবনের যা-কিছু সকল-সময়ের অতীত তার দিকে চোখ তোলবার সময় পাই নি’? তাই তো বলতে বাধ্য হলুম, চলুন ওই জায়গাটাতে।’

 ওর যেটাতে আপত্তি নেই সেটাতে আর-কারো যে আপত্তি থাকতে পারে, অমিত সেই আশঙ্কাটাকে একেবারে উড়িয়ে দিয়ে কথাবার্তা কয়। সেইজন্যে তার প্রস্তাবে অপত্তি করা শক্ত।

লাবণ্য বললে, ‘চলুন।’

 ঘন বনের ছায়া। সরু পথ নেমেছে নীচে একটা খাসিয়া গ্রামের দিকে। অর্ধপথে আর-এক পাশ দিয়ে ক্ষীণ ঝর্নার ধারা

৬৫