পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এক জায়গায় লোকালয়ের পথটাকে অস্বীকার করে তার উপর দিয়ে নিজের অধিকারচিহ্নস্বরূপ নুড়ি বিছিয়ে স্বতন্ত্র পথ চালিয়ে গেছে। সেইখানে পাথরের উপরে দুজনে বসল। ঠিক সেই জায়গায় খদটা গভীর হয়ে খানিকটা জল জমে আছে, যেন সবুজ পর্দার ছায়ায় একটি পর্দানশীন মেয়ে, বাইরে পা বাড়াতে তার ভয়। এখানকার নির্জনতার আবরণটাই লাবণ্যকে নিরাবরণের মতো লজ্জা দিতে লাগল। সামান্য যা-তা একটা কিছু বলে এইটেকে ঢাকা দিতে ইচ্ছে করছে, কিছুতেই কোনো কথা মনে আসছে না— স্বপ্নে যেরকম কণ্ঠরোধ হয় সেই দশা।

 অমিত বুঝতে পারলে, একটা-কিছু বলাই চাই। বললে, ‘দেখুন আর্যা, আমাদের দেশে দুটো ভাষা, একটা সাধু, আর-একটা চলতি। কিন্তু এ ছাড়া আরো একটা ভাষা থাকা উচিত ছিল, সমাজের ভাষা নয়, ব্যবসায়ের ভাষা নয়, আড়ালের ভাষা— এইরকম জায়গার জন্যে। পাখির গানের মতো, কবির কাব্যের মতো, সেই ভাষা অনায়াসেই কণ্ঠ দিয়ে বেরোনো উচিত ছিল, যেমন করে কান্না বেরোয়। সেজন্যে মানুষকে বইয়ের দোকানে ছুটতে হয়, সেটা বড় লজ্জা। প্রত্যেকবার হাসির জন্যে যদি ডেণ্টিস্টের দোকানে দৌড়াদৌড়ি করতে হত তা হলে কী হত ভেবে দেখুন। সত্যি বলুন লাবণ্যদেবী, এখনই আপনার সুর করে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না?’

 লাবণ্য মাথা হেঁট করে চুপ করে বসে রইল।

 অমিত বললে, ‘চায়ের টেবিলের ভাষায় কোন্‌টা ভদ্র কোন্‌‌‌টা অভদ্র তার হিসেব মিটতে চায় না। কিন্তু এ জায়গায় ভদ্রও

৬৬