পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নেই অভদ্রও নেই। তা হলে কী উপায় বলুন। মনটাকে সহজ করবার জন্যে একটা কবিতা না আওড়ালে তো চলছে না। গদ্যে অনেক সময় নেয়, অত সময় তো হাতে নেই। যদি অনুমতি করেন তো আরম্ভ করি।’

 দিতে হল অনুমতি, নইলে লজ্জা করতে গেলেই লজ্জা।

 অমিত ভূমিকায় বললে, ‘রবি ঠাকুরের কবিতা বোধ হয় আপনার ভালো লাগে?’

 ‘হাঁ, লাগে।’

 ‘আমার লাগে না। অতএব আমাকে মাপ করবেন। আমার একজন বিশেষ কবি আছে, তার লেখা এত ভালো যে খুব অল্প লোকেই পড়ে। এমন-কি, তাকে কেউ গাল দেবার উপযুক্ত সম্মানও দেয় না। ইচ্ছে করছি, আমি তার থেকে আবৃত্তি করি।’

 ‘আপনি এত ভয় করছেন কেন?’

 ‘এ সম্বন্ধে আমার অভিজ্ঞতা শোকাবহ। কবিবরকে নিন্দে করলে আপনারা জাতে ঠেলেন, তাকে নিঃশব্দে পাশ কাটিয়ে বাদ দিয়ে চললে তাতে করেও কঠোর ভাষার সৃষ্টি হয়। যা আমার ভালো লাগে তাই আর-একজনের ভালো লাগে না, এই নিয়েই পৃথিবীতে যত রক্তপাত।’

 ‘আমার কাছ থেকে রক্তপাতের ভয় করবেন না। আপন রুচির জন্যে আমি পরের রুচির সমর্থন ভিক্ষে করি নে।’


‘এটা বেশ বলেছেন, তা হলে নির্ভয়ে শুরু করা যাক——
রে অচেনা, মোর মুষ্টি ছাড়াবি কী করে
যতক্ষণ চিনি নাই তোরে?

৬৭