পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ঘটকালি

অমিত যোগমায়ার কাছে এসে বললে, ‘মাসিমা, ঘটকালি করতে এলেম। বিদায়ের বেলা কৃপণতা করবেন না।’

 ‘পছন্দ হলে তবে তো? আগে নাম ধাম বিবরণটা বলো।’

 অমিত বললে, ‘নাম নিয়ে পাত্রটির দাম নয়।’

‘তা হলে ঘটক-বিদায়ের হিসাব থেকে কিছু বাদ পড়বে দেখছি।’

অন্যায় কথা বললেন। নাম যার বড়ো তার সংসারটা ঘরে অল্প, বাইরেই বেশি। ঘরের মন-রক্ষার চেয়ে বাইরে মান-রক্ষাতেই তার যত সময় যায়। মানুষটার অতি অল্প অংশই পড়ে স্ত্রীর ভাগে, পুরো বিবাহের পক্ষে সেটুকু যথেষ্ট নয়। নাম- জাদা মানুষের বিবাহ স্বল্পবিবাহ, বহুবিবাহের মতোই গর্হিত।’

 ‘আচ্ছা, নামটা নাহয় খাটো হল, রূপটা?’

 ‘বলতে ইচ্ছে করি নে, পাছে অত্যুক্তি করে বসি।’

 ‘অত্যুক্তির জোরেই বুঝি বাজারে চালাতে হবে?’

 ‘পাত্র-বাছাইয়ের বেলায় দুটি জিনিস লক্ষ করা চাই— নামের দ্বারা বর যেন ঘরকে ছাড়িয়ে না যায়, আর রূপের দ্বারা কনেকে।’

 ‘আচ্ছা, নামরূপ থাক, বাকিটা?’

 ‘বাকি যেটা রইল সব জড়িয়ে সেটাকে বলে পদার্থ। তা, লোকটা অপদার্থ নয়।’

৭০