পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ব্যাখ্যা মেলে। ইন্দ্র চন্দ্র বরুণ একেবারে স্বর্গের ফ্যাশানদুরস্ত দেবতা, যাজ্ঞিক মহলে তাঁদের নিমন্ত্রণও জুটত। শিবের ছিল স্টাইল, এত ওরিজিন্যাল যে মন্ত্র-পড়া যজমানেরা তাঁকে হব্যকব্য দেওয়াটা বে-দস্তুর বলে জানত। অক্‌স্‌ফোর্ডের বি. এ.র মুখে এ-সব কথা শুনতে আমার ভালো লাগে। কেননা আমার বিশ্বাস, আমার লেখার স্টাইল আছে—— সেইজন্যেই আমার সকল বইয়েরই এক সংস্করণেই কৈবল্যপ্রাপ্তি, তারা ‘ন পুনরাবর্তন্তে’।

 আমার শ্যালক নবকৃষ্ণ অমিতর এ-সব কথা একেবারে সইতে পারত না; বলত, ‘রেখে দাও তোমার অক্‌স্‌ফোর্ডের পাস।’ সে ছিল ইংরেজি সাহিত্যে রোমহর্ষক এম. এ.; তাকে পড়তে হয়েছে বিস্তর, বুঝতে হয়েছে অল্প। সেদিন সে আমাকে বললে, ‘অমিত কেবলই ছোটো লেখককে বড়ো করে বড়ো লেখককে খাটো করবার জন্যেই। অবজ্ঞার ঢাক পিটোবার কাজে তার শখ, তোমাকে সে করেছে তার ঢাকের কাঠি।’ দুঃখের বিষয় এই আলোচনা-স্থলে উপস্থিত ছিলেন আমার স্ত্রী, স্বয়ং ওর সহোদরা। কিন্তু পরম সন্তোষের বিষয় এই যে, আমার শ্যালকের কথা তাঁর একটুও ভালো লাগে নি। দেখলুম, অমিতর সঙ্গেই তাঁর রুচির মিল, অথচ পড়াশুনো বেশি করেন নি। স্ত্রীলোকের আশ্চর্য স্বাভাবিক বুদ্ধি!

 অনেক সময় আমার মনেও খটকা লাগে যখন দেখি কত কত নামজাদা ইংরেজ লেখকদেরও নগণ্য করতে অমিতর বুক দমে না। তারা হল যাদের বলা যেতে পারে ‘বহুবাজারে