পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 হঠাৎ যে উৎসাহে অমিতকুমার ছুটিতত্ত্ব-ব্যাখ্যায় মেতে উঠল তার মূল কারণটা অনুমান করে যতির খুব মজা লাগল। সে বললে, 'কয়দিন থেকে ছুটিতত্ত্ব সম্বন্ধে তোমার মাথায় নতুন নতুন ভাব উঠছে। সেদিনও আমাকে উপদেশ দিয়েছিলে। এমন আর কিছুদিন চললেই ছুটি নিতে আমার হাত পেকে যাবে।

 ‘সেদিন কী উপদেশ দিয়েছিলুম?'

 ‘বলেছিলে, অকর্ত্যবুদ্ধি মানুষের একটা মহদ্‌গুণ, তার ডাক পড়লেই একটুও বিলম্ব করা উচিত হয় না। বলেই বই বন্ধ করে তখনই বাইরে দিলে ছুট। বাইরে হয়তো একটা অকর্তব্যের কোথাও আবির্ভাব হয়েছিল, লক্ষ্য করি নি।'

 যতির বয়স বিশের কোঠায়। অমিতর মনে যে চাঞ্চল্য উঠেছে ওর নিজের মনেও তার আন্দোলনটা এসে লাগছে। ও লাবণ্যকে এতদিন শিক্ষকজাতীয় বলেই ঠাউরেছিল, আজ অমিতর অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পেরেছে, সে নারীজাতীয়।

 অমিত হেসে বললে, 'কাজ উপস্থিত হলেই প্রস্তুত হওয়া চাই, এই উপদেশের বাজার-দর বেশি, আকবরি মোহরের মতো; কিন্তু ওর উল্টো পিঠে খোদাই থাকা উচিত— অকাজ উপস্থিত হলেই সেটাকে বীরের মতো মেনে নেওয়া চাই।'

 ‘তোমার বীরত্বের পরিচয় আজকাল প্রায়ই পাওয়া যাচ্ছে।'

 যতির পিঠ চাপড়িয়ে অমিত বললে, জরুরি কাজটাকে এক কোপে বলি দেবার পবিত্র অষ্টমী তিথি তোমার জীবন-

৭৪