পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লাবণ্য-তর্ক

যোগমায়া বলেন, ‘মা লাবণ্য, তুমি ঠিক বুঝেছ?'

 ‘ঠিক বুঝেছি মা।'

 ‘অমিত ভারি চঞ্চল, সে কথা মানি। সেইজন্যেই ওকে এত স্নেহ করি। দেখো-না, ও কেমনতরো এলোমেলো। হাত থেকে সবই যেন পড়ে পড়ে যায়।'

 লাবণ্য একটু হেসে বললে, 'ওঁকে সবই যদি ধরে রাখতেই হত, হাত থেকে সবই যদি খসে খসে না পড়ত, তা হলেই ওঁর ঘটত বিপদ। ওঁর নিয়ম হচ্ছে, হয় উনি পেয়েও পাবেন না, নয় উনি পেয়েই হারাবেন। যেটা পাবেন সেটা যে আবার রাখতে হবে, এটা ওঁর ধাতের সঙ্গে মেলে না।'

 ‘সত্যি করে বলি বাছা, ওর ছেলেমানুষি আমার ভারি ভালো লাগে।'

 ‘সেটা হল মায়ের ধর্ম। ছেলেমানুষিতে দায় যত-কিছু সব মায়ের, আর ছেলের দিকে যত-কিছু সব খেলা। কিন্তু আমাকে কেন বলছ, দায় নিতে যে পারে না তার উপরে দায় চাপাতে?'

 'দেখছ না লাবণ্য, ওর অমন দুরন্ত মন আজকাল অনেকখানি যেন ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। দেখে আমার বড়ো মায়া করে। যাই বল, ও তোমাকে ভালোবাসে।'

  'তা বাসেন।'

 'তবে আর ভাবনা কিসের?'

৮৭