পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় ధి সবিতা একটু মৌন থাকিয়া বলিলেন, জানবে বই কি। আচ্ছা, যাও এখন । রাত হয়েছে। ও-ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়োগে । বলার ধরণটা শুধু কৰ্কশ নয়। রূঢ়। সারদার কানেও অপমানকার ঠেকিল । আজি সন্ধ্যার পর হইতেই সবিতার নীরস কণ্ঠস্বরের প্রচ্ছন্ন রুক্ষত রমণীবাবুকে বিধিতেছিল, এই কথায় সহসা অগ্নিকাণ্ডের ন্যায় জ্বলিয়া উঠিলেন,-আজি তোমার হয়েছে কি বলো ত ? মেজাজ দেখি থে, ভারি গরম। এতটা ভালো নয়। নতুন-বোঁ । সারদার ভয় হইল। এইবার বুঝি একটা বিশ্ৰী কলহ বাধিবে, কিন্তু সবিতা নীরবে চোখ বুজিয়া তেমনিই শুইয়া রহিল একটা কথারও জবাব দিলেননা । রমণীবাবু কহিতে লাগিলেন, ওই যে বলেচি, সবাই জানে তুমি স্ত্রী নয়-তাতেই লেগেছে যত আগুন । কিন্তু জানেনা কে ? সারদা জ্ঞানেনা, না বাড়ীর লোকের অজানা ? একটা মিছে কথা কত দিন চাপ থাকে ? এতে অপমানটা তোমার কি করলুম শুনি ? সবিতা উঠিয়া বসিলেন। তঁহার চোখের দৃষ্টি বর্শার ফলার মতো তীক্ষু ও কঠিন, কহিলেন, এ কথা তুমি ছাড়া আর কোন পুরুষ মুখে আনতেওঁ লজ্জা পেতে কেবল পুরুষ মানুষ বলেই, কিন্তু তোমাকে বলা বৃথা । তোমার কথায় আমার অপমান হয়েছে। আমি একবারও বলিনি । সারদা ভয়ে ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিল-কি কারচেন মা, থামুন। রমণীবাবু কহিলেন, মুখে বলোনি সত্যি, কিন্তু মনে ভাবচো ত তাই । সবিতা উত্তর দিলেন না, মুখেও বলিনি মনেও ভাবিনি। তোমার স্ত্রী-পরিচয়ে আমার মৰ্য্যাদা বাড়েন। সেজবাবু। ওতে শুধু চক্ষু-লািড়: বঁচে, নইলে সত্যিকার লজ্জায় ভেতরটা আমার পুড়ে কালী হয়ে ওঠে । --কেন ? কেন শুনি ?