পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ. Σα শেষের পরিচয় উত্তর দিতে সবিতারও ক্ষণকাল বিলম্ব হইল, তার পরে কহিলেন, নিজের চোখকে অতো নির্ভল ভাবতে নেই বিমলবাবু, ভারি ঠকতে হয়। বিমলবাবু কহিলেন, হয়না তা বলিনে, কিন্তু পরের চোেখই কি নিৰ্ভল ? সংসারে ঠকার ব্যাপার যখন আছেই। তখন নিজের চোখের জন্যেই ঠিক ভালো। এতে তবু একটা সাস্তুনা পাওয়া যায়। সবিতার হাসিবার মতো মানসিক অবস্থা নয়, হাসির কথাও নয়,- অনিশ্চিত, অজ্ঞাত আতঙ্কে মন বিপৰ্য্যস্ত, তথাপি পরমাশ্চৰ্য্য এই যে মুখে তাহার হাসি আসিয়া পড়িল । এ হাসি মানুষের সচরাচর চোখে পড়েনা, —যখন পড়ে রক্তে নেশা লাগে। বিমলবাবু কথা ভুলিয়া একদৃষ্টি চাহিয়া রছিলেন,-ইহার ভাষা স্বতন্ত্র-পরিপূর্ণ মন্দিরা-পাত্ৰ তৃষ্ণাৰ্ত্ত সদ্যপের চোখের দৃষ্টির সহজত যেন এক মুহূৰ্ত্তে বিকৃত করিয়া দিল এবং সে চাহনির নিগুঢ় অর্থ নারীর চক্ষে গোপন রহিলনা । সবিতার অনতিকাল পূর্বের সন্দেহ ও সম্ভাবিত এইবার নিঃসংশয় প্রত্যয়ে সৰ্ব্বাঙ্গ ভরিয়া যেন লজ্জার কালী ঢালিয়া দিল । মনে পড়িল এই লোকটা জানে। সে স্ত্রী নয় সে গণিকা। তাই অপমানে ভিতরটা যতই জ্বালা করিয়া উঠুক। কড়া গলায় প্রতিবাদ করিয়া ইহারি সম্মুখে মৰ্য্যাদা-হানির অভিনয় করিতেও প্ৰবৃত্তি হইলন। বিগত রাত্রির ঘটনা স্মরণ হইল। তখন অপমানের প্রত্যুত্তরে সেও অপমান কম করে নাই, কিন্তু এই লোকটি অমার্জিত-রুচি, অল্প-শিক্ষিত রমণীবাবু নয়---উভয়ের বিস্তর প্রভেদ-এ হয়ত অপমানের পরিবর্তে একটা কথাও বলিবেনা, হয়ত শুধু অবজ্ঞার চাপা হাসি ওষ্ঠ্যাধরে লইয়া বিনয়-নিম্র নমস্কারে ক্ষমা ভিক্ষা চাহিয়া নিঃশব্দে প্ৰস্থান করিবে । মিনিট দুই-তিন নীরবে কাটিল, বিমলবাবু বলিলেন, কৈ জবাব দিলেননা। আমার ?