পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় S 8 বাতাসে উড়ে যায়, তাকে সুখ-ভোগের জন্যে ভগবান সংসারে পাঠাননা,-তার দুঃখের জীবন দুঃখেই শেষ হয়। এই আমার কপালের লেখা বাবা, আমার জন্যে ভেবে-ভেবে আর তুমি কষ্ট পেয়েনা । বলিতে বলিতে সহসা গলাটা তাহার ভারি হইয়া আসিল, কিন্তু সামলাইয়া লইয়া কহিলেন, রেণু কথাগুলো বললে বিরক্ত হয়েও নয়, দুঃখের ধাক্কায় ব্যাকুল হয়েও নয়। ও জানে ওর ভাগ্যে এ সব ঘটবেই । ওর মুখের ওপর বিষাদের কালো ছায়া নেই, বললেও খুব সহজে,-কিন্তু যা-মুখে-এলো তাই বলা নয়, খুব ভেবে-চিন্তেই বলা । তাই ভয় হয়, এ থেকে হয়ত ওকে সহজে টলানো যাবেনা। তবু ভাবি নতুন-বেী, এ দুর্ভাগ্যেও এই আমার মস্ত সাস্তুনা যে রেণু আমার শোক করতে বসেনি, আমাকে মনেমনেও একবারো সে তিরস্কার করেনি । স্বামীর প্রতি একদৃষ্টি চাহিয়া সবিতার দুই চোখে জল ভরিয়া আসিল, কহিল, মেজকৰ্ত্তা, বেঁচে থেকে সমস্তই চোখে দেখবো, কানে শুনবো কিন্তু কিছুই করতে পাবোন ? ব্ৰজবাবু বলিলেন, কি করতে চাও নতুন-বৌ, রেণু ত কিছুতেই তোমার সাহায্য নেবেনা। --আর আমি সবিতার জিহবা শাসন মানিলনা, অকস্মাৎ জিজ্ঞাসা করিয়া বসিল, রেণু কি জানে। আমি আজও বেঁচে আছি মেজকৰ্ত্তা ? কথা কয়টি সামান্যই, কিন্তু প্রশ্নটি যে তাহার কত দিকে কত ভাবে তাহার রাত্রির স্বপ্ন, দিনের কল্পনা ছাইয়া আছে। এ সংবাদ সে ছাড়া আর কে জানে ? পাংশু-মুখে চাহিয়া উত্তরের জন্য তাহার বুকের মধ্যে - তোলপাড় করিতে লাগিল। ব্ৰজবাবু চুপ করিয়া ক্ষণকাল চিন্তা করিয়া কহিলেন, হাঁ। সে জানে। -জানে আমি বেঁচে আছি ?