পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় Σ8 চাইতে এসেছে। হঠাৎ বাপ মারা গেছে,-ক্রিসংসারে এমন কেউ নেই। বে এ দায় থেকে ওকে উদ্ধার করে দেয়। শুনে তঁর চোখ ছল ছল করে এলো, বললেন, তোমার কি আপনার কেউ নেই ? বললুম, মাসী আছে। কিন্তু কখনো দেখিনি। জিজ্ঞাসা করলেন, শ্ৰাদ্ধ করতে কত টাকা লাগবে ? এটা শুনেছিলুম, বললুম পুরুত মশাই বলেন পঞ্চাশ টাকা লাগবে । তিনি কুলোটা রেখে উঠে গেলেন, আর একটা কথাও জিজ্ঞেস করলেননা। একটু পরে ফিরে এসে আমার উত্তরায়ের আঁচলে দশ টাকায় পাঁচখানি নোট বেঁধে দিয়ে বললেন, তোমার নাম কি বাবা ? বললুম। রাজু, ভালো নাম রাখালরাজ। বললেন, তুমি যাবে বাবা আমার সঙ্গে আমার শ্বশুরবাড়ীর দেশে ? সেখানে ভালো ইস্কুল আছে, কলেজ আছে, তোমার কোন কষ্ট হবেন । যাবে ? আমাকে জবাব দিতে হোলোনা, সরকার মশাই যেন ঝাপিয়ে পড়লো, বললে, যাবে মা, যাবে, এক্ষুনি যাবে। এত বড় ভাগ্য ও কোথায় কার কাছে পাবে ? ওর চেয়ে অসহায় এ গায়ে আর কেউ নেই মা,-মা দুৰ্গা তোমাকে ধনে-পুত্রে চির-সুখী করবেন। এই বলে বুড়ে সরকার হাউ হাউ করে কঁদতে লাগলো। শুনিয়া তারকের চক্ষুও সজল হইয়া উঠিল। রাখাল বলিতে লাগিল, পিতৃ শ্ৰাদ্ধ ও মহামায়ার পূজো দুই-ই শেষ হলো । ত্রয়োদশীর দিন যাত্ৰা ক’রে চিরদিনের মত দেশ ছেড়ে তেঁার স্বামীগৃহে এসে আশ্রয় নিলুম। দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ; তাই সবাই বলে নতুন-মা, আমিও বললুম নতুন-মা। শ্বশুর শাশুড়ী নেই, কিন্তু বহু পরিজন । অবস্থা সচ্ছল, ধনী বললেও চলে। এ বাড়ীর শুধু তো তিনি গৃহিণীই নয়, তিনিই গৃহকত্রী। স্বামীর বয়স হয়েছে, চুলে পাক ধরতে সুরু করেছে, কিন্তু যেন ছেলে-মানুষের মত সরল। এমন মিষ্টি মানুৰ আমি আর কখনাে দেখিনি,-দেখােবামাত্রই যেন ছেলের আদরে আমাকে তুলে