পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় RS NR গেলে, বারান্দায় দাড়িয়ে দেখলুম। পথের বঁাকে তোমার গাড়ী হ’লো অদৃশ্য, চোখের কাজ শেষ হ’লে কিন্তু মন নিলে তোমার পিছু। সঙ্গে সঙ্গে কত দূর যে গেলো তার ঠিকানা নেই। ফিরে এসে ঘরে বসলুম, -একলা নিজের মনে ছেলেবেলা থেকে সেই সে-দিন পৰ্য্যন্ত কত ভাবনাই এলো গেলো, হঠাৎ এক সময়ে আমার মন কি বলে উঠলো জানো ? বললে, সবিতা, যৌবন গেছে, রূপ ত আর নেই। তবুও যদি উনি ভালোবেসে থাকেন সে র্তার মোহ নয়, সে সত্যি। সত্য কখনাে বঞ্চনা করেন,- তাকে তোমার ভয় নেই। যা নিজে মিথ্যে নয় সে কিছুতে তোমার মাথায় মিথ্যে অকল্যাণ এনে দেবেন।--তাকে বিশ্বাস করে । বিমলবাবু বলিলেন, তোমাকে সত্যিই ভালোবাসতে পারি এ তুমি বিশ্বাস করে নতুন-বো ? ই, করি। নইলে ত তোমার কোন দরকার ছিলনা। আমার তি আর রূপ নেই। বিমলবাবু হাসিয়া বলিলেন, এমন তা হতে পারে আমার চোখে তোমার রূপের সীমা নেই। অথচ, রূপ আমি সংসারে কম দেখিনি নতুন-বেী। শুনিয়া সবিতাও হাসিলেন, বলিলেন, আশ্চৰ্য্য মানুষ তুমি। এ ছাড়া আর কি বলবো তোমাকে ? বিমলবাবু বলিলেন, তুমি নিজেও কম আশ্চৰ্য্য নয়। নতুন-বেী। এই স্ত সেদিন এমন ক’রে ঠকলে, এতবড় আঘাত পেলে, তবু, যে কি ক’রে এত শীঘ্ৰ আমাকে বিশ্বাস করলে আমি তাই শুধু ভাবি। সবিতা কহিলেন, আঘাত পেয়েছি সত্যি, কিন্তু ঠাকিনি। . কুয়াশার আড়ালে একটানা দিনগুলো অবাধে বয়ে যাচ্ছিল এই তোমরা দেখেচে, হয়ত এমনিই চিরদিন বয়ে যেতো,--যাবজীবন দণ্ডিত কয়েদির জীবন যেমন করে কেটে যায় জেলের মধ্যে, কিন্তু হঠাৎ উঠলে ঝড়, কুয়াশা গেল।