পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় રરઝ ঝি রাগ করিয়া জবাব দিল, খাবি খেতে যাবে কিসের দুঃখে দাদা, গোরস্ত ঘরে সবাই যা খায় সে-ও তাই খাবে। তোমাকে ভাবতে হবেনা, --জীব দিয়েছেন যিনি আহার দেবেন। তিনি । সে ব্যবস্থা আগে ছিল নানী, এখন আর নেই। এই বলিয়া রাখাল পুনশ্চ হাসিয়া রান্নার ব্যাপারে। মনোনিবেশ করিল। তাহার রান্না হয় কুকারে । সৌখীন মানুষ, ছোট, বড়, মাঝারি নানা আকারের কুকার । আজ রান্না চাপিল বড়টায় । তিন চারিটা পাত্রে নানাবিধ তরকারি এবং মাংস। অনেকদিন ধরিয়া এ কাজ করিয়া ঝি পাকা হইয়া গেছে,- বলিতে কিছুই হয়না । 约 ঠাই করিয়া, খাবার পাত্ৰ সাজাইয়া দিয়া ঘরে ফিরিবার পূর্বে ঝি মাথার দিব্য দিয়া গেল পেট ভরিয়া খাইতে । বলিল, সকালে এসে যদি দেখি সব খাওনি পড়ে আছে, তাহলে রাগ করবো বলে গেলুম। রাখাল কহিল, তাই হবে নানী পেট ভরেই থাবাে। আর যা-ই করি তোমাকে দুঃখ দেবেন । ঝি চলিয়া গেলে রাখাল ইজি-চেয়ারটায় শুইয়া পড়িল। খাবার তৈরির প্রায় ঘণ্টা দুই দেরি, এই সময়টা কাটাইবার জন্য সে একখানা বই টানিয়া লইল, কিন্তু কিছুতেই মন দিতে পারেনা, মনে পড়ে সারদাকে । মনে পড়ে নিজের অকারণ অধীরতা । আপনাকে সম্বরণ , করিতে পারে নাই, অন্তরের ক্রোধ ও ক্ষোভের জ্বালা কদৰ্য্য রূঢ়তায় বারে বারে ফাটিয়া বাহির হইয়াছে,-ছেলেমানুষের মতো। বুদ্ধিমতী সারদার কিছুই বুঝিতে বাকি নাই। এমন করিয়া নিজেকে ধরা দিবার কি আবশ্যক ছিল ? কি আৰশ্যক ছিল নিজেকে ছোট করার । মনে মনে লজ্জার অবধি রহিলনা, ইচ্ছা করিল আজিকার সমস্ত ঘটনা কোনমতে যদি মুছিয়া ফেলিতে পারে ।