পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ર જે જે শেষের পরিচয় সম্প্রদান করতে পারলে তঁর মনের গুরুতর দুশ্চিন্তা কেটে যাবে। তথন তিনি সহজেই সুস্থ হয়ে উঠবেন আশা হয়। রেণু মৃদুকণ্ঠে বলিল, বাবাকে "ফেলে আমি কোথাও যেতে পারবেন। রাজুদা ! -কিন্তু না গিয়েও যে উপায় নেই দিদি। তুমি যদি ছেলে হতে, ফেলে যাওয়ার কথাই উঠতেন । কিন্তু মেয়েদের যে আশ্ৰয় ছাড়া উপায় নেই । --অল্পবয়সী বিধবা মেয়েরা তো সারাজীবন বাপের বাড়ী থাকে দেখেচি । রাখাল শুষ্ক হাসিয়া জবাব দিল, থাকে সত্যি, কিন্তু তাদের ঘদি পিতৃকুলে দাড়াবার মত আশ্রয় না থাকে কোনও সময়ে, তখন তারা শ্বশুরকুলেই গিয়ে আশ্রয় নেয় এও দেখেচোঁ নিশ্চয় । স্বামী না থাকলেও তাদের শ্বশুরকুল তো থাকে । রেণু নতমুখে কিছুক্ষণ মৌন থাকিয়া ধীরে ধীরে বলিল, রাজুদা, আমি বাবাকে নিজের মুখে জানিয়েচি, বিয়েতে আমার একটুও রুচি নেই। আমি বিয়ে করতে পারবন । রাজু হাসিয়া উঠিল। বলিল, তোকে বুদ্ধিমতী ঠাওরাতাম, এখন দেখছি তুই একেবারে পাগল রেণু । আরে, সেদিন তুই ওকথা না বললে কাকাবাবু কি বেঁচে থাকতে পারতেন ? হঠাৎ কারবার ফেলা হয়ে সৰ্ব্বস্ব গেল।’ বসত বাড়ীখানি শুদ্ধ নিলামে ওঠায় একেবারে পথে দাড়ালেন । সেই দুঃসময়ে তোর বিয়ে বন্ধ হওয়ার ছুতো নিয়ে ঝগড়া করে হেমন্তমামা তার বোন আর ভাগ্নীর পাওনা কড়ায় গণ্ডায় আঠারো আনা বুঝে নিয়ে সরে দাড়ালেন। পাছে কাকাবাবুর দেনার দায়ে তাদেরও পথে দাড়াতে হয় ! সংসার এমনিই স্বার্থপর বোন !