পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় V or --আপনি ভাগ্য মানেন কি ? -কতকটা মানি বৈকি। তবে অন্ধ অদৃষ্টবাদী নই। —“জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ” এই তিনটে ব্যাপার যে সম্পূর্ণ ভাগ্যের’পরে নির্ভর করে এটা স্বীকার করেন। কি ? —না। এযুগে বিজ্ঞানের সাহায্যে জন্ম ও মৃত্যুকে সম্পূর্ণ না হলেও, কতকটা ইচ্ছানিয়ন্ত্রিত করতে পেরেচে। মানুষ। যদিও জন্ম-মৃত্যু ব্যাপারটা একেবারেই প্ৰকৃতির নিয়ম ; জীবমাত্রেই প্ৰকৃতির নিয়মের অধীন। সুতরাং ও দু’টো বাদ দিয়ে বিবাহটিাই ধরুন। ওটা সামাজিক সুবিধার জন্য মানুষের গড়া নিয়ম। কাজেই, ও ব্যাপারটায় অদৃষ্টের বিশেষ হাত নেই। মানুষের ইচ্ছাই এক্ষেত্রে প্রধান । এ সকল যুক্তিতর্ক ব্ৰজবাবুর হয়তো ভাল লাগিতেছিলনা। সুতরাং তিনি এ আলোচনায় আর যোগ না দিয়া নীরবে চক্ষু মুদিয়া ডেক্‌চেয়ারে পড়িয়া রহিলেন । বিমলবাবুও হস্তস্থিত সংবাদপত্রে মনোনিবেশ করিলেন। সন্ধ্যা ঘনাইয়া উঠিতেছিল, সংবাদপত্রের অক্ষরগুলি ক্রমশঃই অস্পষ্ট হইয়া আসিতেছে। বিমলবাবু দুই একবার মুখ তুলিয়া তাকাইলেন আলো জ্বালা হইয়াছে কিনা ৷ অৰ্দ্ধশায়িত ব্ৰজবাবু মুদ্রিত নয়নে কি ভাবিতেছিলেন কে জানে। হঠাৎ সোজা হইয়া উঠিয়া বসিয়া ডান হাত বাড়াইয়া বিমলবাবুর একখানি হাত চাপিয়া ধরিলেন। ব্যগ্ৰকণ্ঠে কহিলেন, বিমলবাবু, তা’হলে আপনি সত্যই বিশ্বাস করেন বিবাহ নিয়তির অধীন নয়, মানুষেরই ইচ্ছার অনুগত ? বিমলবাবু অত্যন্ত বিস্মিত হইয়া বলিলেন,হী, আমার নিজের বিশ্বাস তাই বটে। কিন্তু আপনি হঠাৎ এ নিয়ে এত চঞ্চল হয়ে উঠলেন কেন ব্ৰজবাবু?