পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় ঘরের বাহিরে অপেক্ষা করিতে বলিয়া সারদা রেণুর কাছে আসিয়া বসিল । জিজ্ঞাসা করিল,-কাকাবাবু ভাল আছেন তো ? হাতের পশমের কাজটা শেষ করিতে করিতে রেণু জবাব দিল,-হঁ। অনেকক্ষণ স্তব্ধতার মধ্য দিয়া উৰ্ত্তীর্ণ হইয়া গেল, কহিবার মত কোনও কথা খুজিয়া না পাইয়া সারদা মনে মনে সঙ্কোচ ও অম্বস্তি অনুভব করিতেছিল। তাই উঠি-উঠি ভাবিতেছে এমন সময়ে রেণুই কথা কহিল। উলের টুপি বুনিতে বুনিতে মৃদুকণ্ঠে কহিল, সারদাদিদি, মাকে বুঝিয়ে বোলে তিনি যেন মনে কষ্ট না পান । আমার জন্য তঁাকে মনের মধ্যে দুঃখ দুর্ভাবনা রাখতে মানা কোরো । যা” হবার নয় তা” যে হয়না তিনি আমার চেয়ে ভালই জানেন। দুঃখমোচনের চেষ্টায় উভয় পক্ষেরই দুঃখের বোঝা ভারি হয়ে উঠবে মাত্ৰ । সারদা নিৰ্বাক হইয়া রহিল। মনে হইতে লাগিল ঐ কৰ্ম্মনিবিষ্টা নতনেত্ৰা মেয়েটি তার অত্যন্ত নিকটে বসিয়া থাকিয়াও অতিশয় সুদূর হইতে শান্ত কথা কয়টি যেন বলিয়া পাঠাইল । আরও কতক্ষণ সময় কাটিয়া গেলে সারদা একটু ইতস্ততঃ করিয়া কহিল-আমি তা’হলে আজ যাই ভাই । মাথা হেলাইয়া ইসারায় রেণু সম্মতি জানাইল । দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া সারদা ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল । রেণু একই ভাবে অখণ্ড মনোযোগের সহিত উলের ক্ষুদ্র টুপিটি ক্ষিপ্ৰহস্তে বুনিতে লাগিল। রাত্রের মধ্যেই এটি শেষ করিয়া ফেলিয়া একজোড়া ছোট মোজা ধরিতে হইবে । ) প্ৰায় সাত আটমাস হইল ব্ৰজবাবু গ্রামের বাড়ী ছাড়িয়া কলিকাতায়