পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় &br বিশ্বসংসারে তঁহার কেহ নাই, কিছু নাই। স্বামী, সন্তান, গৃহ পরিজন, সংসার প্রতিষ্ঠা, মানমৰ্য্যাদা সমস্তই ঐন্দ্রজালিকের ভোজবাজীর ন্যায় অন্তৰ্হিত হইয়া গিয়াছে। ভয়চকিন্তচিত্তে । সহসা অনুভব করিলেন, সংসার ও সমাজের বাহিরে নির্বান্ধব নিরাবলম্ব তিনি এক শূন্যের মধ্যে জুলিতেছেন। পা রাখিয়া দাড়াইবার মত মাটিটুকুও পায়ের নিচে আশ্রয় আর নাই । জীবনের এই আকস্মিক সৰ্ব্বনাশের ক্ষণে যে অতিপঙ্কিল আশ্রয়ভূমির সঙ্কীর্ণতম পরিধির মধ্যে নিজেকে দাড় করাইয়াছেন, তাহ সামাজিক জ্ঞানবুদ্ধি বিবেচনার সম্পূর্ণ অগোচরে। কেবলমাত্র জৈব প্রকৃতির স্বাভাবিক আত্মরক্ষা প্ৰবৃত্তিবশেষ্ট, জীবনধারণের অনিবাৰ্য্য প্রয়োজনে । কিন্তু দিন যাইবার সঙ্গে সঙ্গে সেই কলুষিত আশ্রয়ের ক্লেদ ও কদৰ্য্যতায় তঁহার দেহ মন প্ৰতিদিন ঘূণায় সঙ্কুচিত হইয়া উঠিয়াছে, জাগ্ৰত আত্মচেতনা প্ৰতি মুহূৰ্ত্তে অনুতাপের মৰ্ম্মান্তিক আঘাতে আহত ও জর্জরিত হইয়াছে। তবুও এই অসহ ও অবাঞ্ছিত সঙ্কীর্ণ আশ্রয়টুকু ত্যাগ করিয়া আরও অনিশ্চিতের মধ্যে ঝাঁপ দিতে ভরসা পান নাই । নিজের একান্ত নিরুপায় অবস্থা বুঝিতে পারিয়া অন্তরে অন্তরে শিহরিয়া উঠিয়াছেন । এমনি করিয়াই ভঁাহার দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বৎসরের পর বৎসর নিয়ত-অস্বস্তির মধ্যে কাটিয়া গিয়াছে। জীবনের প্রারম্ভিক্ষণে বলিষ্ঠ প্ৰাণবন্ত পুরুষ কেহ যদি তাহার জীবনের পথে আসিয়া দাড়াইতেন, আজ র্তাহার উজ্জল নারীজীবনের দীপ্তিতে সংসার ও সমাজ আলোকিত হইয়া উঠিত না কি ? প্ৰসন্ন দেহ মনের, আনন্দিত হৃদয়ের অনুকূল আবেষ্টন প্রভাবে তিনি কি আজি লক্ষ্মীস্বরূপিণী পত্নী, আদর্শ জননী, মমতা মাধুৰ্য্যময়ী নারী হইয়া উঠিতে পারিতেন না ? কিসের জন্য তঁহার জীবনের উদয়ঊষা এমন অকাল