পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নতুন-মা ডাকেন নাই, রাখাল নিজে যাচিয়া তাহার সাহায্য করিতে চলিয়াছে। তখনকার দিনে রমণীবাবু রাখালরাজকে ভালো করিয়াই চিনিতেন । তাহার পরে দীর্ঘ তেরো বৎসর গত হইয়াছে এবং উভয় পক্ষেই পরিবর্তন ঘটিয়াছে বিস্তর কিন্তু তাহাকে না-চিনিবারও হেতু নাই ; অন্ততঃ, সেই সম্ভাবনাই সমধিক । গাড়ীর মধ্যে বসিয়া রাখাল ভাবিতে লাগিল হয়ত তিনি দোকানে ঘান নাই, হয়ত, ফিরিয়া আসিয়াছেন, হয়ত বাড়ীতে না-থাকার অপরাধে তাহারি সম্মুখে নতুন-মাকে অপমানের একশেষ করিয়া বসিবেন ;-তখন, লজ্জা ও দুঃখ রাখিবার ঠাই থাকিবেনা,- এইরূপ নানা চিন্তায় সে নতুন-মারি পাশে বসিয়াও অস্থির হইয়া উঠিল। স্পষ্ট দেখিতে লাগিল তাহার এই অভাবিত আবির্ভাবে রমণীবাবুর ঘোরতর সন্দেহ জাগিবে এবং রেণুর বিবাহ ব্যাপারটা যদি নতুন-মা গোপনে রাখিবার সঙ্কল্পই করিয়া থাকেন ত তাহ নিঃসন্দেহ ব্যর্থ হইয়া যাইবে । কারণ, সত্য ও মিথ্যা অভিযোগের নিরসনে আসল কথাটা ভঁাহাকে অবশেষে প্ৰকাশ করিতেই হইবে । সেই অভদ্র চাকরিটা ড্রাইভারের পাশে বসিয়াছিল ; মনিবের ভয়ে তাহার তাগিদের উদভ্ৰান্ত রুক্ষতা ও প্ৰত্যুত্তরে নতুন-মার বেদনা-ক্ষুব্ধ লজ্জিত কথাগুলি রাখালের মনে পড়িল এবং সেই জিনিসেরই পুনরাবৃত্তি স্বয়ং মনিবের মুখ হইতে এখন কি আকার ধারণ করিবে ভাবিয়া অতিষ্ঠা হইয়া কহিল, নতুন-মা, গাড়ীটা থামাতে বলুন আমি নেবে যাই।